প্রতীক ওমর: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি শিশু উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশের শিশুরাও এর নেতিবাচক প্রভাবে রয়েছে বলে ইউনিসেফের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের শিকার হওয়া উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম। এই তালিকায় পাকিস্তান ১৪, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান যৌথভাবে ১৫ এবং ভারতের অবস্থান ২৬ নম্বরে। এই তালিকায় নেপালের অবস্থান ৫১, শ্রীলঙ্কা আছে ৬১তম স্থানে। ভুটান আছে ১১১তম অবস্থানে, ভুটানের শিশুরা অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিতে আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত এসব শিশুরা ৩৩টি দেশে বসবাস করে। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ রয়েছে।
২০ আগস্ট প্রকাশিত ইউনিসেফের ‘জলবায়ু সঙ্কট কার্যত শিশু অধিকারের সঙ্কট’ শীর্ষ এ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসছে। ইউনিসেফ প্রথমবারের মতো শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকি সূচক (সিসিআরআই) প্রবর্তন করেছে। ঘূর্ণিঝড়, দাবদাহের মতো জলবায়ু ও পরিবেশগত প্রভাবের মুখে পড়ার পাশাপাশি শিশুদের জরুরি পরিষেবা কতটা ঝুঁকিতে রয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে এবং দেশগুলোকে ক্রমানুসারে স্থান দেয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার শিশুরা নদীর বন্যা এবং বায়ু দূষণের কারণে ক্রমাগত বিপদের মধ্যে পড়ছে। এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে শিশু স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং শিক্ষায় বিনিয়োগ শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব থেকে রক্ষা করতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লারিয়া-আদজেই এই প্রতিবেদনে বলেন, ‘আমাদের কাছে দক্ষিণ এশিয়ার লাখ লাখ শিশুর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। খরা, বন্যা, বায়ু দূষণ এবং নদী ভাঙ্গনে লাখ লাখ শিশুকে গৃহহীন ও খাদ্য সংকটে পড়ছে। তারা স্বাস্থ্যসেবা ও পানি সংকটেও রয়েছে। একসঙ্গে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ মহামারী দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের জন্য আরো উদ্বেগজনক সংকট তৈরি করেছে। জরুরি ভাবে যদি আমরা পানি, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষায় বিনিয়োগ করি, তাহলে আমরা তাদের ভবিষ্যতকে পরিবর্তনশীল জলবায়ু এবং অবনতিশীল পরিবেশের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে পারবো’।
তিনি আরো বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি শিশু রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক তরুণ রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। প্রতি বছর তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা, আগুন এবং খরা এই অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে প্রভাবিত করে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির অর্থনীতিতেও এসব প্রভাব ফেলে। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক তাপমাত্রা এবং পরিবর্তিত আবহাওয়া এশিয়ায় বসবাসকারী লাখ লাখ শিশুর ভবিষ্যতকে ক্রমাগত ঝুঁকিতে ফেলেছে। এর আরও খারাপ প্রভাব হচ্ছে যে এসব শিশুরা একটি বিপর্যয় থেকে ওঠার আগেই অন্যটি আরেকটি প্রকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। এর ফলে ক্রমাগত অগ্রগতি বারবার বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। লারিয়া আরো বলেছেন, “বিশ্বজুড়ে আমরা যে ভয়ঙ্কর পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি দেখছি তা অল্প কয়েকজনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু অনেকেই এর দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে”। “আমাদের অবশ্যই গ্রিনহাউস গ্যাস নি:সরণ কমাতে হবে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তর স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে সিসিআরআই ভারতকে ৩৩ টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে একটি হিসাবে রেখেছে, যেখানে বারবার বন্যা এবং বায়ু দূষণের পরিবেশগত ধাক্কায় নারী ও শিশুদের আর্থ-সামাজিক বিরূপ পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। প্রায় ৬০০ মিলিয়নেরও বেশি ভারতীয় আগামী বছরগুলিতে ‘তীব্র পানির সংকটের’ মুখোমুখি হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। একই সময়ে যখন বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে তখন ভারতের শহুরে অঞ্চলে বন্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। ২০২০ সালে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ু বিশিষ্ট ৩০০ টি শহরের মধ্যে ২১ নম্বরে ছিলো ভারত। (আইকিউ এয়ার রিপোর্ট ২০২০)।ইউনিসেফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি ড. ইয়াসমিন আলী হক বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনে শিশু অধিকারের সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিতে শিশুরা চরম ভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে জলবায়ু পরিবর্তনকে কার্যকর ভাবে মোকাবেলা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইউনিসেফ আশা করে যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের রক্ষা করতে এবং শিশুদের বসবাসযোগ্য পৃথিবীর উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে তারা দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে।