প্রতীক ওমর: ‘আমাদের নদীমাতৃক ও সমুদ্র বেষ্টিত বাংলাদেশের নৌ সেক্টরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত হয়ে আছেন। দুবাইয়ের সুলতান, সৌদি আরবের রেড সী, তারা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে যৌথভাবে কাজ করতে চায়। সিঙ্গাপুর পোর্ট আমাদের দেশে নতুন পোর্ট তৈরি করতে চায়। পৃথিবীর কাছে বাংলাদেশের প্রতি যে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে তার কারণ হচ্ছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর ডায়নামিক লিডারশিপ’।
বগুড়ার সারিয়াকান্দির সাথে জামথৈল নদীপথে ফেরি চলাচলের উদ্বোধনকালে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সারিয়াকান্দির যমুনা নদীর কালিতলা ঘটে উপস্থিত হয়ে তিনি এই নদীপথে ফেরি চলাচলের উদ্বোধন করেন। এসময় জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ আসনের সাংসদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও বগুড়া-১ আসনের সাংসদ সাহাদারা মান্নান, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে যমুনার নদীর পূর্বপাড় জামথৈল ঘাট থেকে নদীপাথে ফেরিটি দুপুর আড়াইটায় সারিয়াকান্দি উপজেলার কালিতলা ঘাটে এসে পৌঁছে। সেখানে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসময় তিনি আরো বলেন, ‘যমুনা নিয়ে এযাবৎ পর্যন্ত কেউ ভাবেনি। জিও ব্যাগ আর ব্লগ দিয়ে কোন রকমে তাৎক্ষণিক ভাঙ্গন রোধ করা হয়েছে। এটা কিন্তু স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধানের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘যমুনা কড়িডোর’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। সেই প্রকল্প নিয়ে স্ট্যাডি করতেই দেড় হাজার কোটি টাকা লাগবে। যাতে যমুনাপাড়ের মানুষ কিয়ামত পর্যন্ত ভাঙ্গনের শিকার না হয়’।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আজ থেকে ১০ বছর আগে বগুড়ার পাশেই সাঘাটা, ফুলছড়ি, গাইবান্ধা এলাকা নদী ভাঙ্গন আর মঙ্গা পিড়িত এলাকা হিসেবেই বিশে^র কাছে পরিচিত ছিলো। এখানকার দারিদ্রতাকে পুঁজি করে অনেকেই ধনাঢ্য হয়েছেন, কেউ নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন কিন্তু অভাবী মানুষের দু:খমোচন হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত করেছেন’।
এদিকে বগুড়ার সারিয়াকান্দী থেকে এই নদীপথের যাত্রা শুরু ফলে উত্তরের জেলা গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চপড় জেলার মানুষ রাজধানীর ঢাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারবে। সড়ক পথে নানা প্রতিবন্ধকতা পারি দিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ ঢাকায় আসেন। ফেরেনও একই ভাবে। ফেরি চলাচলের ফলে সড়ক পথের চেয়ে ঢাকার দূরত্ব কমলো ৮০ কিলোমিটার।
এদিকে যমুনার চরাঞ্চলগুলোতে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শহরগুলোতে নিতে পারবে কৃষকরা। ফলে কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে এই সার্ভিসটি।
যমুনা অববাহিকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য চর। এই চরগুলোর বাসিন্দাদের বর্ষা মৌসুমের একমাত্র বাহন হচ্ছে নৌকা। ভরা বর্ষায় প্রত্যেক চর থেকেই মানুষ সহজেই নৌকাযোগে উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারে। কিন্তু শুকনা মৌসুমে তপ্তবালির মধ্যে পয়ে হেটেই শহরে যাতায়াত করতে হয়। ভারিপণ্য, কৃষিপণ্য বাহনের জন্য শুকনা মৌসুমে ঘোড়ারগাড়ী, গরুরগাড়ীই একমাত্র ভরস তাদের।নৌ পরিবহনমন্ত্রী আজকের বক্তব্যে আভাস দিয়েছেন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে যমুনা নদী খনন করা হবে। এতে বছরজুড়েই ফেরি এবং নৌকা যাতায়াত করতে পারবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চরাঞ্চলের মানুষের শুকনা মৌসুমের কষ্টও লাঘব হবে।
উল্লেখ্য নদী খননের আগ পর্যন্ত এই পথে সি-ট্রাক (ফেরির চেয়ে ছোট) নিয়মিত যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে। এতে প্রায় ২শ যাত্রী, ৩টি প্রাইভেট গাড়ি, ২০টি মোটরসাইকেল পারাপার করা সম্ভব হবে। আপাতত জনপ্রতি ভাড়া হবে ১০০ টাকা। যানবাহনের ভাড়া দুই একদিন পরে নির্ধারণ করা হবে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।