সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ০৯:০২ অপরাহ্ন

কোভিডে পর্যটন খাতের ক্ষতি পূরণের প্রস্ততি চলছে

প্রতীক ওমর
  • Update Time : সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ৮৯৬ Time View
বগুড়ার একদল পর্যটক সিকিমের ছাঙ্গু লেকে।

সারা বিশ্বেই কোভিডে বিভিন্ন খ্যাত ক্ষতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব বিভিন্ন ভাবে পড়েছে। বিশেষ করে পর্যটন খাতে বাংলাদেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান এখনো বের করা সম্ভব হয়নি। তবে ‘বাংলাদেশ উন্নয়ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সঠিক পরিসংখ্যান বের করার কাজ শুরু করেছে। সেই সাথে কোভিডে পর্যটন খাতের ক্ষতি পূরণের প্রস্ততি পুরোদমে চলছে। এমন তথ্য নিশ্চিৎ করে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের বিপনন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের বলেন, ‘কোভিডে পর্যটন খাতে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। আমরা প্রথমে কোভিডকালীন ক্ষতির একটি সঠিক পরিসংখ্যার বের করার জন্য ‘বাংলাদেশ উন্নয়ণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে (বিআইডিএস) দিয়ে জড়িপ কাজ শুরু করেছি। রিপোর্টটি প্রস্তত হলে আমরা ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারবো। সেই সাথে এই পরিসংখ্যানে মধ্য দিয়ে পর্যটন খাত থেকে জিডিবিতে কি পরিমাণ অংশগ্রহন আছে সেটিও নির্দিষ্ট করা। দ্বিতীয়ত আমরা একটি ট্যুরিজম রিকোভারি প্লান করে মন্ত্রণালয়ে পাঠাই। মন্ত্রণালয় প্লানটি অনুমোদন দিয়ে সেটি বাস্তবায়ণের জন্য ২৬টি গাইডলাইন দিয়েছে। এসবের মধ্যে ট্যুরিজমের সমস্যাগুলো আমরা চিহ্নিত করার কাজ করছি। তারপর হাওড় ট্যুরিজম, নদী ট্যুরিজম, এলজিইডি, রোডস এ্যান্ড হাইওয়েসহ প্রত্যেকটি সেক্টরকে আমরা ট্যুরিজমের সাথে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি।
এদিকে ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের (ডব্লিউটিটিসি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড কালীন ২০২০ সালে পর্যটন খাতে দেশের জিডিপিতে ৫৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা অবদান রেখেছে, যা ২০১৯ সালে ছিল ৮০ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এই সেক্টরে আয় কমেছে ২৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১৯-২০২০ অর্থবছরে হোটেলটি ১৩.৭৬ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করেছে। হোটেলস্ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (হিল) বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সোনাগাঁও হোটেলের স্বত্বাধিকারী। হোটেলস্ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং প্যান প্যাসিফিক হোটেল এন্ড রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেড এর মধ্যে সম্পাদিত অপারেটিং চুক্তি অনুসারে ১৯৮১ সালের এপ্রিল হতে হোটেলটি পরিচালিত হয়ে আসছে। হোটেলটি ২০১৯ সালে কর পূর্ববর্তী নীট মুনাফা অর্জন করে ৪১.০৮ কোটি টাকা (অনিরীক্ষিত) এবং ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত কর পূর্ববর্তী নীট মুনাফা অর্জন করে ১৪.৯১ কোটি টাকা (অনিরীক্ষিত)। প্রতিবেদনাধীন সময়ে হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেলের মাধ্যমে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ১০৯ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এছাড়াও গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী এ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা মোট ৫ হাজার ৮৮৩টি এবং মোট আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ৯.৪৪ কোটি টাকা। গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ ট্রাভেল এজেন্সি (নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ অনুযায়ী এ মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত ট্রাভেল এজেন্সির সংখ্যা মোট ৫৮৮৩টি এবং মোট আদায়কৃত রাজস্বের পরিমাণ ৯.৪৪ কোটি টাকা’।

বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এদেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সবিশেষ ভূমিকা রেখে চলছে। এ সংস্থাটি নিজস্ব অর্থ বিনিয়োগ করে এবং কিছুসরকারি সহায়তায় পর্যটন নগরী কক্সবাজার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা, সিলেট, কুয়াকাটা, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, খুলনা, মেহেরপুর, গোপালগঞ্জসহ সমগ্র দেশের আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানসমূহে হোটেল, মোটেল, পিকনিক স্পট, রেস্তোরাঁ, বার, সুইমিং পুল, গল্ফ কোর্স ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট সুবিধাদি প্রবর্তন করে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের সেবা প্রদান এবং বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে অগ্রগতিতে বিশেষ অবদান রেখে চলেছে। এছাড়া, এ সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ‘ন্যাশনাল হোটেল এন্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট’ কর্তৃক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরী করে তাদের দেশে-বিদেশে তারকামানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইন্স এবং অন্যান্য পর্যটন ব্যবসায় নিয়োগের উপযুক্ত করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা করে তা সফলভাবে পরিচালনা করছে। এ ইনস্টিটিউট হতে এ যাবৎ ৫৫,০০০ (পঞ্চান্নহাজার) প্রশিক্ষণার্থী সফলভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে-বিদেশে পর্যটন ও হোটেল শিল্পে সাফল্যের সাথে কাজ করছে।

পর্যটন সেক্টরকে গতিশীল করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম এক্সপ্লোরার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম সাগর বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি প্রস্তাবনা দিয়ে বলেন, দেশে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম কংগ্রেস চালু করা। সরকার সকল ধরণের ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে সিআইপি নির্বাচিত করলেও ট্যুরিজম ব্যবসায়ী থেকে সিআইপি করেনা, তিনি দাবী জানান, ট্যুরিজম থেকেও যেন সিআইপি নির্বাচন করা হয়। পর্যটন শিল্পের উপখাত নির্ধারণ করে তার বাস্তবায়ন করার প্রতি তিনি নজর দিতে বলেছেন। এছাড়ও প্রতিবছর নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেনির শিক্ষার্থীদের মাঝে ট্যুরিজম অলিম্পিয়ার্ড চালু করা দরকার বলে মনে করেন। এতে প্রান্তিক পর্যায়ে ট্যুরিজমের সুফল পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের বিপনন, পরিকল্পনা ও জনসংযোগ পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের পর্যটন সেক্টর নিয়ে আরো বলেন, ২০২১ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন সেক্টরে কি পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান হবে সেটি বের নির্ণয় করতে অন্য আরেকটি হবেষণা কাজে হাত দিয়েছি এবং এই সেক্টরের শ্রমশক্তির গতি প্রকৃতি কেমন হবে সেটিও এই গবেষণায় তুলে ধরা হবে। অনেকেই বলছেন, আগামী ৫/৭ বছর পর হয়তো আমাদের ট্যুর গাইড লাগবে না। সব কিছু অনলাইন হয়ে যাবে। সব কিছু মিলে আমরা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ জেলা ব্রান্ডিং কৌশলপত্র তৈরি করেছে। সেখানে পর্যটন অন্তভূক্ত ছিলো। বর্তমানে এটুআই, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, ট্যুরিজম বোর্ড এবং সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক মিলে আবারো জেলা ব্রান্ডিংয়ের কাজ চলছে সেখানে ৬৪ জেলার মধ্যে ২৭টি জেলাই পর্যটন ব্রান্ডিং হচ্ছে। ৩৪টি জেলা হচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ে।

২০১৯ সালে ডমেস্টিক ট্যুরিজমে এক জেলার মানুষ অন্য জেলায় ভ্রমণ করেছে প্রায় দেড় কোটি। আর বাইরের দেশ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ শুধু ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশে এসেছে। তারা কেবলমাত্র ট্যুরিজম ভিসিতেই এসেছিলো। আমরা এখন এই সেক্টরকে ঘুরে দাঁড় করানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভালো পরিবেশ নাই। ভালো ওয়াস রুম, ডরমেটরী, খাওয়ার হোটেল এসবের অভাব আছে। আমরা এই দিকগুলোকে বিবেচনায় এনে পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করছি। যাতে পর্যটকরা আসতে উৎসাহ পায়।

উল্লেখ্য, পর্যটন খাতের গুরুত্ব তুলে ধরতে আন্তুর্জাতিক ভাবে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যটন দিবস পালিত হয়। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এবাবের প্রতিপাদ্য হিবেকে উল্লেখ করেছে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধিতে পর্যটন’। বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের দিবসটি পালিত হয়েছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin