নিজস্ব প্রতিবেদক: বগুড়ার করতোয়া নদী দখলদারীদের ছবি সাতমাথায় ঝুলিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে নদীপড়ের মানুষদের পক্ষ থেকে। বগুড়ার একটি বেসরকারি এনজিও এবং প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি এক সময়ের বহমান করতোয়া নদী দখল করে উচু বিল্ডিং তৈরি করেছে। নদী কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই নদীটি হত্যার শিকার হয়েছে। প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে অবৈধভাবে নদী দখল করলেও প্রশাসন বরাবরেই নিরব। প্রশাসন লোক দেখানো কিছু উদ্ধার কার্যক্রম করলেও অদৃশ্য কারণে থেমে যায় পদক্ষেপ। ফলে প্রতিনিয়তই নদীটি গিলে খাচ্ছে একটি বেসরকারি এনজিও এবং প্রভাবশালী মহল।
বগুড়ায় দখল-দূষণে বিপন্ন করতোয়ায়সহ অন্যান্য নদী জনমানুষের জীবিকা ও পরিবেশের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা সভায় নদী পড়ের মানুষ এবং বগুড়ার সচেতন মহল এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়ার একটি রেস্টেুরেন্টে রেসকিউ আওয়ার পিপল (রোপ) এর সম্পাদক তাহমিনা পারভীন শ্যামলী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনা সভায় কথা সাহিত্যিক বজলুল করিম বাহার বলেন, করতোয়া নদীকে বলাৎকার করা হয়েছে। মাকে বলাৎকার করা আর নদীকে বলাৎকার করা একই জিনিস। এই নদীকে রক্ষায় অন্যান্য কর্মসূচির সাথে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে নদী রক্ষার মেসেজ দিতে হবে।
আলোচনায় দখলদারীদের ছবি সাতমাথায় ঝুলিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন মৎস্য চাষী নিত্যানন্দ দাস। তিনি বলেন, নদী দখলকারীরা আসামীদের সমান। তাই আসামীদের তালিকার মতো তাদেরও তালিকা সাতমাথায় টাঙিয়ে দেয়া হোক।
আদর্শ কলেজের শিক্ষক জাকির ইসলাম সবুজ বলেন, নদীকে যারা হত্যা করেছে, তারা মানুষ হতে পারে না এমনটা মনে করেন। করতোয়ার জলাধার, নদী তলদেশ ভরাট হচ্ছে। বগুড়ার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক অবস্থায়, সংবাদকর্মীদের এসব নিয়ে আরও বেশি বেশি লেখালেখি করা উচিত।
পরিবেশ ও নাগরিক উন্নয়ন কমিটির পরিচালক আব্দুল খালেক বলেন, নদী দখলমুক্ত করতে প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করতে হবে। এছাড়ও আব্দুল খালেক আরও বলেন, নদী রক্ষায় গণশুনানি করতে হবে। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে যেতে হবে। তাদের জাগ্রত করতে হবে। কারণ পরিবর্তন আনতে তরুণরা সবচেয়ে অগ্রনী ভূমিকা রাখতে পারে।
বগুড়া পৌরসভার ৩ নম্বর কাউন্সিলর তরুণ কুমার চক্রবর্তী জানান, নিজের বাড়ি থেকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তা না হলে করতোয়া নদীর দখল দূষণে আশানুরুপ ফল পাওয়া যাবে না। তিনি আরও জানান, করতোয়া নদীর বাতাসও এখন দূষিত। এর পাশে গেলে নাকে রুমাল দিয়ে থাকতে হয়। কলকারখানার বর্জ্য সব যাচ্ছে এই নদীতে। এর জন্য তিনি মনে করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধেই আগে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন স্বপ্নের নির্বাহী পরিচালক জিয়াউর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলের ব্যুরো প্রধান হাসিবুর রহমান বিলু, কাউন্সিলর শিখা, বেলার আইনজীবী আসাদুল হক গালীব, আদর্শ কলেজের শিক্ষক জাকিরুল ইসলাম সবুজ. তন্ময় সান্যাল, মেহেরুন্নেসাপ্রমূখ। সঞ্চালনা করেন এএলআরডির প্রোগ্রাম অফিসার মির্জা আজিম হায়দার।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি)। কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে বগুড়ার স্থানীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেসকিউ আওয়ার পিপল (রোপ) ও স্বপ্ন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নদী পাড়ের মানুষ, গণমাধ্যম কর্মী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। করতোয়া নদী দখল-দূষণ প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেন তারা।