বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:০২ অপরাহ্ন

এক’শ আঠারোতেও নূয়ে পড়েননি মহির

প্রতীক ওমর
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ মে, ২০২৪
  • ১০৩ Time View

সেই ১৯০৬ সালে পৃথিবীর মুখ দেখেছেন। সূর্যের আলো, নির্মল বাতাসে বেড়ে উঠেছেন বাবা মার ছত্রছায়ায়। বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার শুড়িমারা গ্রামের মৃত রফিতুল্লাহ সাকিদার এবং মৃত ছালেহা বেগমের ঘরে জন্ম গ্রহণ করেন মহির উদ্দিন সাকিদার। ছোট বেলা থেকেই চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ তিনি। বসে থাকতেন না কোনভাবেই। বাবার কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন ছোট বেলা থেকেই। বেশ মনোযোগী মানুষ মহির। কোন শ্রেণিতেই আটকে থাকতে হয়নি। বার্ষিক পরীক্ষাগুলোতে ধারাবাহিকভাবে পাস করে ক্রমান্বয়ে উপরের ক্লাশে উঠেছে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছেন স্থানীয় মালিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। আর হাইস্কুল শেষ করেছেন চাঁচাইতাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে। তার ঐকান্ত প্রচেষ্টায় ১৯২৬ সালে ম্যাট্টিকুলেশন পাস করেন। এরপর পাকিস্তানের করাচিতে চাকরি জীবন শুরু করেন। সেখানে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় আবার পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে ফিরে আসেন।


দীর্ঘ জীবনে গড়ে ওঠা সহপাঠি, বন্ধু বান্ধবদের কেউ আর দুনিয়াতে বেঁচে নেই। অনেক আগেই একেএকে সবাই চলে গেছেন। অনেকটা বন্ধুহীন হয়ে পড়েন মহির। এক যুক আগে ছেলের চাকরির সুবাদে বগুড়া শহরে চলে আসেন। শহরের বক্সিবাজার এলাকায় একটি ভাড়াবাড়িতে তিনি বর্তমানে অবস্থান করছেন। মহল্লার প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা করেই তিনি কিছুটা নি:সঙ্গতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। মহির সাকিদার মাঝেমধ্যে হতাশ হয়ে পড়েন। জীবনের নানা চড়ইউৎড়ই তাকে আবার শত বছর পূর্বে ফিরে নিয়ে যায়। তারুণ্যে সময়গুলো এখন মানের কোণায় এসে নাড়া দেয়। ফিরে যেতে চায় ফেলে আসা অতীতে। কিন্তু কল্পনায় সম্ভব হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। মহল্লার মসজিদে আজান হলে আগে ভাগেই ছুটে আসেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতে আদায় করেন। আল্লাহর জিকির করে বেশিরভাগ সময় কাটছে তার। বিকেল সন্ধ্যায় বাজারে এসে প্রবীনদের সাথে গল্পগুজব করেন। এলাকার ছোটবড় সব বয়সের মানুষ মহিরকে শ্রদ্ধা করেন। কারো সাথেই তার মনোমালিন্য নেই।

কিছু দিন ধরে বগুড়ার একজন সিনিয়র সাংবাদিক মতিউল ইসলাম সাদীর কাছে তিনি একটা ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছেন। জীবনের শেষ সময়ে তাকে নিয়ে লেখা একটা ফিচার পত্রিকার পাতায় পড়তে চান। তার ইচ্ছা পুরনের জন্য সাংবাদিক মতিউল ইসলাম সাদী এই প্রতিবেদককে মহির সাকিদারের সন্ধান দেন। গেলো কয়েক দিন আগে বক্সিবাজার গেলে তার জীবনের গল্প শোনান। তিনি বলেন, আমাদের সময়গুলোতে মানুষে বিবেকবোধ ছিলো জীবন চলার পাথেয়। সামাজিকতা, আতিথিয়তা এগুলোকে খুব বেশি প্রধান্য দেয়া হতো। পাড়ার কেউ বিপদে পড়লে পরশিরা সাবাই পাশে দাঁড়াতো। অন্যের বাড়ির বিয়েতে পাশের বাড়ির লোকজনও স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহন করতো। এখন জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কোন কিছুই মেলাতে পারছি না। কি দেখে বড় হলাম কি দেখে মরে যাবো। তিনি তৎকালীন পড়ালেখা, শিক্ষক শিক্ষার্থীর সম্পর্ক, আত্মসম্মানবোধ, ছোট বড়র সম্পর্ক কেমন ছিলো একেএকে সব কিছু বললেন। চলমান সময়ের ডিজিটাল পরিবর্তন তার মাথায় ঢোকে না।


মহির সাকিদারের ছেলে চার জন আর মেয়ে তিন জন। এর মধ্যে এক ছেলে মারা গেছেন। বহু বছর আগে মারা গেছেন জীবন সঙ্গীনিও।
এখন সময় কাটান কীভাবে জানতে চাইলে মহির বলেন, আল্লাহর জিকির, নামাজ বন্দেগী আর মহল্লার প্রবীন মানুষদের সাথে কথাবলে সময় কাটাই। খারাপ লাগে বন্ধুদের কথা মনে হলে, কাছের আত্মীয়দের কথা মনে হলে। আমার সমবয়সীদের কেউ আজ বেঁচে নেই। এমনকি আমার অনেক ছোট তারাও বহু আগে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের কথা মনে হলে খুব অসহায় লাগে। নি:সঙ্গ লাগে।
বক্সিবাজারের বাসিন্দা সাংবাদিক মতিউল ইসলাম সাদী বলেন, দীর্ঘ এক যুগধরে মহির সাকিদার এই মহল্লার বাসিন্দা। তিনি প্রতিদিন বিকেল হলে আমার কাছে আছেন গল্প করে সময় কাটানোর জন্য। মসজিদে আজান হলেই আগেভাগে চলে আসেন। এলাকার প্রায় সবার প্রিয় হয়ে উঠেছেন বর্ষিয়মান এই মানুষটি। আমরাও তাকে সময় দেই তার নি:সঙ্গতা কাটানোর জন্যই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin