বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৯ অপরাহ্ন

দেশ থেকে ৫০ বছরে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা পাচার : অর্থনীতি সমিতি

নিউজ ডেস্ক:
  • Update Time : সোমবার, ৩ জুন, ২০২৪
  • ৯০ Time View
সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশ থেকে গত ৫০ বছরে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। আর এ সময়ে সৃষ্ট কালোটাকার পরিমাণ হলো ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আগামী বাজেটে কালোটাকা ১০ হাজার কোটি টাকা এবং পাচারকৃত অর্থ ৫ হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের সুপারিশ করেছে অর্থনীতি সমিতি।

তারা বলেছেন, তারা সমগ্র সমাজ-অর্থনীতি-রাষ্ট্রকাঠামোকেই এমন বিকৃত করে ছেড়েছে। যা বজায় রেখে শোষণমুক্ত, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক সমাজ, শোভন সমাজব্যবস্থা গড়া অসম্ভব। কালোটাকার ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে সমাজ-সংস্কৃতি-অর্থনীতি সর্বত্র, যে কারণে এখন ‘অর্থপূজা’ সর্বজনিনতা পেয়েছে। এখন ‘অর্থপূজা’র ওপরে আর কোনো পূজা নেই।

সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর ইস্কাটনে সমিতির কার্যালয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বিকল্প বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো: আইনুল ইসলাম এসব তথ্য তুলে ধরেন।

প্রস্তাবনায় মো: আইনুল ইসলাম বলেন, গত ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে সৃষ্ট মোট পুঞ্জিভূত কালোটাকার আনুমানিক পরিমাণ হবে ১ কোটি ৩২ লাখ ৫৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জিভূত মোট কালোটাকার মাত্র ০.৯৮ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি। যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ১০ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ পাচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গত ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশে মোট পুঞ্জিভূত অর্থ পাচারের আনুমানিক পরিমাণ হবে ১১ লাখ ৯২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। আর আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে আমরা পুঞ্জিভূত মোট অর্থ পাচারের ০.৪৯ শতাংশ উদ্ধারের সুপারিশ করছি। যেখান থেকে উদ্ধারকৃত আহরণ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা।

সমিতি বলেছে, সবকিছু বিচারে কালোটাকার রাজনৈতিক অর্থনীতির মর্মবস্তুসহ কালোটাকার মালিকদের এহেন প্রভাব-প্রতাপ ইতোমধ্যে যেসব মারাত্মক ‘স্বাভাবিক অঘটন’ ঘটিয়েছে সেগুলো হলো- অতীতে দেশে রাজনীতি ও অর্থনীতির মধ্যে যে ভারসাম্য ছিল, সেটি আর নেই। অতীতে সরকার ও ক্ষমতার মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল সেটি বিনষ্ট হয়েছে। অতীতে সরকারের হাতে ক্ষমতা ছিল এখন নেই। এখন সরকার সরকারের জায়গায় আছেন, তবে ক্ষমতাহীন। ক্ষমতা রাজনীতি থেকে অভিবাসিত হয়েছে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক কালোটাকার মালিক, রেন্ট সিকার, লুটেরা, পরজীবী, অনুৎপাদনশীল নিকৃষ্ট পুঁজির হাতে। কালোটাকার মালিক গোষ্ঠী/শ্রেণি ‘গণতন্ত্রমুক্ত জোনের বাসিন্দা’ এবং গণতন্ত্রকে তারা ভোটের খেলা বানিয়ে ছেড়েছে- ছাড়বে, যেখানে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের স্বাধীনতা বা প্রয়োজন কোনোটাই থাকবে না।

কালোটাকার দেশীয় মালিকেরা বৈশ্বিক কালোটাকা, বৈশ্বিক রেন্টসিকার আর্থিকীকরণকৃত পুঁজির অধীনস্থ দোসর। কালোটাকার মালিকগোষ্ঠী তাদের কালোটাকা দিয়ে আর যাই করুক না কেন দেশের মানুষের ‘মোট চাহিদা’ বাড়াতে সক্ষম নয়। কালোটাকা এমনকি উৎপাদনশীল অর্থপুঁজিতে রূপান্তরে ভীত অথবা আগ্রহী নয়। এর বিস্তৃতি সমাজ অর্থনীতিতে বৈষম্য বাড়িয়েছে-বাড়াচ্ছে-বাড়াবে, ফলে উত্তরোত্তর অধিক হারে মানুষ বহুমুখী বিচ্ছিন্নতার শিকার হতে বাধ্য। কালোটাকার এহেন বিস্তৃতি সমাজ-অর্থনীতি, রাষ্ট্র-সরকারের চরম ভারসাম্যহীনতা ও অস্থিতিশীলতার কারণ হতে বাধ্য। যেভাবে চলছে, সেভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হতে পারে ফ্যাসিস্ট সরকার, ইসলাম ধর্মভিত্তিক উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। আর অবস্থা পরিবর্তিত হলে হবে সামাজিক-অর্থনৈতিক মৌলিক পরিবর্তন, যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও অসাম্প্রদায়িক-আলোকিত মানুষের শোভন সমাজ বিনির্মাণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin