নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবহেলায় ব্যলট পেপারে প্রতীক ভুল। ফলে নির্বাচনের নির্ধারিত দিনে ভোটগ্রহন মাঝপথে স্থগিত করা হয়। স্থগিতকৃত নির্বাচন পুনরায় গ্রহণ করতে সরকারের প্রায় ৪ কোটি টাকা গচ্ছা যাচ্ছে। সরকারের এই আর্থিক ক্ষতির দায়কে নেবে এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সচেতন মহলে। গেলো মে মাসের ২৯ তারিখ দেশের বিভিন্ন উপজেলার সাথে বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদেও ভোটগ্রহণ চলছিলো। সদরের ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) প্রার্থী ইফতারুল ইসলাম মামুন নামের এক প্রার্থী ভোটগ্রহণের মাঝপথে অভিযোগ তোলেন প্রতীক বরাদ্দের দিন তাকে কাঠিওয়ালা আইসক্রিমের ছবি দেওয়া হয়। সেই প্রতীক নিয়েই তিনি প্রচারণা চালান। কিন্তু ভোট শুরু হওয়ার পর দেখা যায় ব্যালটে বরাদ্দ প্রতীকের সাথে মিল নেই। সেখানে কুলফি আইসক্রিম দেওয়া হয়েছে। এতে ভোটাররা তার প্রতীক চিনতে পারছে না। এরপর অভিযোগ করলে নির্বাচন কমিশন থেকে বেলা ১১টার পর বগুড়া সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের (পুরুষ) ভোটগ্রহণ স্থগিত করে। সেই নির্বাচন পূনরায় আগামী ৯ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে নির্বাচনের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতাও পূনরায় করতে হচ্ছে কমিশনকে। এতে নির্বাচনটিতে আগের মতই সকল কর্মকর্তা কর্মচারি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীসহ সব ধরণের আয়োজন থাকছে। সম্ভব্য ব্যায় আগের মতই প্রায় চার কোটি টাকা হচ্ছে। কর্মকর্তাদের এমন উদাসীনাতায় সরকারের পাশাপাশি প্রার্থীদেরও ব্যাক্তিগত ব্যায় বেড়েছে কয়েকগুণ। বিষয়টি নিয়ে প্রার্থীদের মধ্যে যেমন মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তেমনি সচেতন মহলও কথা তুলেছেন কর্মকর্তাদের অবহেলার বিষয়ে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন বলেন, অদক্ষ নির্বাচন কর্মকর্তাদের অবহেলায় সরকারের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি আবারো ভোটের জন্য আরেকটা দিন অফিস আদালত ছুটিতে থাকবে। এতে জনভোগান্তিও বাড়বে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের উচিত প্রার্থীদের সাথে বসে তাদের ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষতি পুষে দেয়ার প্রতিশ্রুতিসহ পুনরায় তফশিল ঘোষণা করে পূননির্বাচন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনের ব্যায় জনগণের টাকায় করে সরকার। এই আর্থিক ক্ষতি পুষাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন থেকে কর্তন করার জোরদাবী জানান।
এই বিষয় নিয়ে পালকি প্রতীকের প্রার্থী মশিউর রহমান বলেন, নির্বাচন অফিসের ভুলের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের। ২৯ মে ভোটে আমাদেরকে তেমন কোন বেগ পেতে হয়নি। ওইদিন ভোট কেন্দ্রগুলোতে আমাদের কোন এজেন্ট ছিলনা কিন্তু এবার দিতে হচ্ছে অর্থাৎ এবার আমাদেরকে লাখ লাখ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। শুধু এক পদের ভোট দিতে ভোটাররা আসতে চাচ্ছেনা তাদেরকে আনতেও আমাদের অতিরিক্ত শ্রম দিতে হচ্ছে।
উড়োজাহাজ প্রতীকের হাবিব হাসান বলেন, আমি নির্বাচনে ব্যয় করে সর্বশান্ত হয়ে গেছি পূনরায় ব্যয় করার মত আমার অর্থ নেই। আমি ডিসি মহাদয়কে বলেছিলাম যে, ২৯ তারিখের নির্বাচনে ভোট স্থগিতের পূর্বে যে ভোট কাষ্ট হয়েছে তাই গণনা করে বিজয়ী ঘোষণা করা হোক কিন্তু তাও করা হয়নি। অর্থাৎ যার ও যাদের কারণে আমাদের ও রাষ্ট্রের এই ক্ষতি করা হলো তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
গ্যাস সিলিন্ডার প্রতীকের জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের এই দুইবারের নির্বাচনের ব্যায়ের দায়ভার কে নেবে? টিউবওয়েল প্রতীকের প্রার্থী শ্রী দিপংকর কুমার দাস বলেন, আমরা এতোটাই পরিশ্রম করেছি যে প্যান্ট পরতে গেলে কোমরে আটকাচ্ছেনা। নির্বাচন কমিশনের হটকারি সিদ্ধান্তের জন্য আমরা ১৬ জন প্রার্থীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এই দায় নির্বাচন কমিশন এড়াতে পারেনা। বিষয়টি নিয়ে প্রায় সকল প্রার্থীদের সাথে কথা বললে তারা একই ধরনের মন্তব্য করে।
এ বিষয়ে আইসক্রীম প্রতীক প্রার্থী ইফতারুল ইসলাম মামুনের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার চেষ্টা করার পরে পাওয়া গেলেও তিনি অফিসিয়াল কাজে থাকার কারনে কথা বলতে পারবেনা বলে জানান।
বগুড়া জেলা অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার সৈয়দ আবু ছাইদ বলেন, ভুল ভুলই। এর দায়ভার আমি কারো কাছে দিতে চাচ্ছিনা। আমি পারিবাকি ভাবে খুবিই বিপর্যন্ত অবস্থার মধ্যে আছি তাই এসব বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবোনা। এই বলে তিনি বিষয়টি নিয়ে সংবাদ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান বলেন, গতকাল তিন উপজেলার ভোট গ্রহণ করে আমি খুবিই ক্লান্ত এসব বিষয়ে আমি কথা বলতে পারবো না। আমার হাতে কথা বলার সময় নেই। তিনি জেলা অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু ছাইদ সাহেবের সাথে কথা বলার জন্য বলেন।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোছাঃ আছিয়া খাতুন শিউলি বলেন একটি নির্বাচন পার্পাস আমাদের দাপ্তরিক ব্যায় প্রায় দুই কোটি টাকা। এছাড়া প্রশাসনকে যেমন ম্যাজিষ্ট্রেট, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসাদের জন্য অনেক ব্যায় হয়। তাতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি টাকায় ব্যায় হয়। ৯ তারিখের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও প্রায় একই একই ব্যায় হবে।
বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফিরোজা পারভিন বলেন, প্রতীক ভুলের বিষয়টি নির্বাচন অফিসের কোথাও থেকে হয়েছে। এই দায়টি মূলত তাদের। ৩য় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমরা প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছি এবং তা সঠিকভাবে পালন হয়েছে।
এ বিষয়ে বগুড়া জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন প্রতীক ভুলের কারনে বগুড়া সদর উপজেলার পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছিল। এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখছেন ঘটনাটি কিভাবে হয়েছে। ৯ জুনে এই পদে পূনরায় যে ভোট গ্রহণ হবে এবং তাতে যা ব্যয় হবে তা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশন বহণ করবেন।