সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন

বেনজীরের চার ফ্ল্যাট দুদকের হেফাজতে

নিউজ ডেস্ক:
  • Update Time : শুক্রবার, ৭ জুন, ২০২৪
  • ১০২ Time View

পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদের পরিবারের মালিকানাধীন গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) দায়িত্ব দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে তাঁদের যেসব কৃষিজমি রয়েছে, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা দুটির কৃষি কর্মকর্তাদের। একই সঙ্গে বেনজীর আহমেদের পরিবারের মৎস্য ও প্রাণীর খামার দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলার প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তাকে।

আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলার কৃষি কর্মকর্তা ও প্রাণিসম্পদবিষয়ক কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য দুই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এর বাইরে কক্সবাজারের জমি দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসককে। বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এসব সম্পদ থেকে যে আয় হবে, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেন। প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।

দুদকের পক্ষ থেকে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তিন মেয়ের নামে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও কক্সবাজারে থাকা জমি, ফ্ল্যাট, মৎস্য খামারসহ যাবতীয় সম্পদের ফিরিস্তি বৃহস্পতিবার আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়।

দুদকের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে আদালতকে বলা হয়েছে, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ক্রোক করা সম্পত্তি দেখভালে তত্ত্বাবধায়ক না থাকায় সেগুলো বেহাত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্রোক করা জমিতে রিসোর্ট, কটেজ, ডরমিটরি, নৌকা, বাগান, পুকুর, পশুর ও মৎস্য খামার রয়েছে। এ ছাড়া বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রকমের রাইড রয়েছে। জমির ওপর স্থাপনা, আসবাব ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী, বিভিন্ন মেশিনারি ক্রোকের আওতাভুক্ত করা দরকার।

বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি–অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক। সংস্থাটি এখন পর্যন্ত বেনজীর ও তাঁর পরিবারের নামে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) খুঁজে পেয়েছে। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও এক মেয়ের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। ফ্ল্যাটগুলোর আয়তন মোট ৯ হাজার ১৯২ বর্গফুট। বেনজীর আহমেদ অবসরে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছিল এক দিনে (২০২৩ সালের ৫ মার্চ)। দাম দেখানো হয় মাত্র ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে এ বিষয়ে শুনানির সময় আদালত দুদকের পিপি মাহমুদ হোসেনের কাছে গুলশানে বেনজীর আহমেদের ফ্ল্যাটের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চান। তখন পিপি মাহমুদ হোসেন আদালতকে জানান, চারটি ফ্ল্যাটে দুদকের কোনো কর্মকর্তা ঢুকতে পারেননি। ফলে ফ্ল্যাটের ভেতরকার অবস্থা সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি। তখন পিপির উদ্দেশে আদালত বলেন, বেনজীর আহমেদের স্ত্রী–সন্তানদের চারটি ফ্ল্যাট দেখভালের জন্য দুদকের সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হলো।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গোপালগঞ্জ জেলার তিনটি উপজেলা গোপালগঞ্জ সদর, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী–সন্তানদের নামে জমি রয়েছে। এ ছাড়া মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচর উপজেলায় জমি রয়েছে। এর বাইরে ঢাকার সাভার, কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় জমি রয়েছে। পিপি মাহমুদ হোসেন আদালতকে আরও জানান, বেনজীর আহমেদের নামে ২৮টি পুকুর, গরু ও মাছের খামার রয়েছে।

বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদ দেখভালে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দেওয়ার আবেদনে দুদক আদালতকে জানিয়েছে, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় সাভানা ফার্ম প্রডাক্টস, সাভানা পার্ক রিসোর্ট অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব, সাভানা অ্যাগ্রো লিমিটেডে ও সাভানা ন্যাচারাল পার্ক লিমিটেডের চেয়ারম্যান জীশান মির্জার নামে জমি কেনা হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে জমি কেনা হয়। এ ছাড়া গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জা, মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীরের নামে জমি রয়েছে। আর কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ায় বেনজীর আহমেদ, জীশান মির্জা, ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজীরের নামে জমি রয়েছে।

পিপি মাহমুদ হোসেন জানান, আদালত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের জমি দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন। আর ঢাকার সাভারের জমি দেখভালের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী–সন্তানদের নামে থাকা সম্পদ দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে সর্বশেষ পরিস্থিতি লিখিতভাবে জানাবে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, আজ থেকে বেনজীর আহমেদের সম্পদ থেকে যা আয় হবে, তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।

এদিকে সময়ের আবেদনের প্রেক্ষাপটে জিজ্ঞাসাবা‌দের জন্য বেনজীর আহমেদকে হাজির হতে নতুন তারিখ দিয়েছে দুদক। ২৩ জুন তাঁকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে গত ২৮ মে বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ পাঠানো হয়। সেই নোটিশে বেনজীরকে ৬ জুন এবং তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদের ৯ জুন দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের কার্যালয়ে বেনজীরের পক্ষে তাঁর আইনজীবী আরও ১৫ দিনের সময় চান। দুদকের উপপরিচালক বরাবর সময় চেয়ে আবেদনটি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন এই তারিখ দেওয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin