সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন

বগুড়ার মুুজিব কিল্লা এখন মরিচের গোডাউন! উদ্বোধনের আগেই ফাটল

প্রতীক ওমর
  • Update Time : রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪
  • ৫৫৯ Time View

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কাজ শেষ হয়েছে বগুড়া’র মুজিব কিল্লা’র। শুরু থেকেই দৃশ্যমান নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কাজ শেষেও অনিয়মের সেই অভিযোগ বাতাসে ঘুরছে। ঠিকাদার বলছেন কাজ শেষ, কিন্তু বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। অপরদিকে, দায়িত্বরতরা বলছেন কাজ বুঝে নেয়া হয়েছে এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছি। ঠিকাদার এবং কর্তৃপক্ষের দুই ধরণের তথ্যে বিষয়টি আরো ধোঁয়াশার মধ্যে পতিত হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে- তাহলে সরকারের এতো দামী প্রকল্পের অভিভাবক কে? কী হচ্ছে প্রকল্পটি নিয়ে?
সরজমিন গিয়ে দেখা গেলো ভবনটির বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। ছাদের উপরে পানি জমে থাকায় ভিতরের দেয়াল ভিজে যাচ্ছে। আপাতত: ভবনটি ব্যবহার হচ্ছে লাল মরিচের গোডাউন হিসেবে।


বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার পূর্ব সুজাইতপুর এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সহযোগিতায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এটি নির্মাণ করে। যমুনা পাড়ের মানুষ যাতে বন্যাকালীন তাদের গবাদী পশুসহ আশ্রয় নিতে পারে সেজন্য এই কিল্লাটি নির্মাণ করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্রে জানাযায়, ২০২১ সালের ৬ অক্টোবর প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিলো ২০২১ সালের ২৮ ডিসেম্বর। কাজটির চুক্তিমূল্য ছিলো ১ কোটি ৯৮ লাখ ৫হাজার ৯৯৮ টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বগুড়া রাকিব কনস্ট্রাকশন।
অনিয়ম দিয়েই শুরু হয়েছিল কিল্লাটির কার্যক্রম। যার কারনে ভবনটির বিভিন্নস্থানে ফাটল ধরেছে। ২০২০ সালে মুজিব কিল্লা তৈরির স্থান হিসেবে সোনাতলা উপজেলার পাকুল্লা ইউনিয়নের সুজাইতপুর এলাকাকে বেছে নেয়া হয়। জায়গা শনাক্তের পর কিল্লাটি মাটি থেকে কত উচ্চতায় হবে তা নির্ণয়ে ভুলের কারণে কাজের কিছুটা বিলম্ব হয়েছিল। তবে, ২য় বারের সংশোধনীতে উচ্চতা ঠিক করা হয়। নির্মান কাজ শুরু হয় নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে। এখানে যে বালু ব্যবহার করা হয়েছে তা কিল্লাটির পাশেই যমুনা থেকে উত্তোলোন করা হয়। অর্থাৎ কিল্লাটি নির্মান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হয়েছে চরম অনিয়ম। দুর্গম যমুনার চরে হওয়ার অযুহাত দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে তেমন জাননি। কিল্লাটি নির্মানে কয়েক দফায় ইঞ্জিনিয়ার পরিবর্তন হলেও অনিয়ম ঠেকানো যায়নি।


এই প্রতিবেদক কিল্লাটি নির্মাণের শুরু থেকেই চোখ রাখেন। বিভিন্ন সময় দফায় দফায় নির্মান কার্যক্রম দেখতে গিয়ে নির্মান শ্রমিকদের সাথে কথা বলা এবং ইট, বালু, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের ছবি এবং ভিডিও ধারণ করা হয়। এসব অনিয়মের বিষয়গুলো দফায় দফায় উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করলেও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। কিল্লাটি নির্মাণে নিম্নমাণের সামগ্রি ব্যবহার হয়েছে। ফলে নতুন অবস্থাতেই বেহাল দশায় পড়েছে।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বগুড়া রাকিব কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারি রফিকুল ইসলামের কাছে মুজিব কিল্লায় ফাটল ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাটলতো দেখিনি আমি। ভবনটির কাজ শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের শেষের দিকে। কর্তৃপক্ষ এখনো বুঝে নেয়নি।

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া বলেন, কিল্লাটি ইতোমধ্যেই হস্তান্তর হয়েছে। তবে, বুঝে নেয়ার পর তিনি পরিদর্শনে যাননি। নির্মাণ বাস্তবায়নে আপনি কোন দায়িত্বে ছিলেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজটি আমার দপ্তরের হলেও আমি এর সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলাম না। ভবনটি ফাটা এমন তথ্য তার কাছে নেই।
তৎকালীন চলতি দায়িত্বে থাকা সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম কিল্লার বিষয়টি বারবার এড়িয়ে যান এবং মুজিব কিল্লায় নিয়োগকৃত ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফার উপস্থিতিতেই এসব অনিয়ম চলমান ছিল। তার সাথে বার বার যোগাযোগ করলেও তিনি নানা ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গেছেন।

২০২১ সালের ১০ জুন নির্মান কাজ শুরু হয়ে শেষ হবার কথা ছিল একই বছরের ২৮ ডিসেম্বরে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হয়। এই দীর্ঘ সময় কাজের মাধ্যমে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া হয়েছে ভবনের পরতে পরতে।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বললে তাদের প্রায় সবাই বলেছে কিল্লাটি কী জন্য তৈরি হয়েছে সেটা তাদের কেউ জানে না। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা আলোচিত কিল্লাটি বর্তমানে শুকনা মরিচের গোডাউন ডিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের উপসহকারি প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, কিল্লাটির নির্মাণ কাজ শেষ। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন। আমরা তার সময়ের অপেক্ষায় আছি। ভবনটি যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে নির্মাণ হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। ভবনটি ফাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফাটতেই পারে। তবে কি জন্য ফেটেছে সেটা না দেখে বলা মুশকিল। আর কিল্লার মধ্যে লাল মরিচের গোডাউন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্থানীয় একজন ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য কান্টু আকন্দের কাছে কিল্লার চাবি রাখা হয়েছে। তিনি হয়তো সেখানে মরিচ রেখেছেন।

কিল্লাটির বিষয়ে সোনাতলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, যেহেতু কিল্লাটি আমাদের বুঝে দেয়নি, চাবিও হাতে পাইনি সুতরাং ভবনটি ফাটল ধরলে তার দায়দায়িত্ব ঠিকাদারের।
বগুড়া জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ভবনটিতে কেন ফাটল ধরেছে সেই বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin