ভারতের কলকাতার ফ্ল্যাটে খুন করার আগে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের ওপর চেতনানাশক প্রয়োগ করা হয়। এরপর তাঁকে বালিশচাপা দেওয়া হয়। পরে তাঁর পোশাক খুলে ছবি তোলেন খুনিরা। সেই ছবি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো হয় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ ওরফে বাবুর ফোনে।
সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এ তথ্য জানতে পেরেছে।
সূত্রগুলো বলছে, খুনের পর সংসদ সদস্যের ছবি আওয়ামী লীগ নেতা কামালের কাছে পাঠিয়েছেন চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়া। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে যুক্ত ছিলেন শিমুল। তিনি অপরাধ স্বীকার করে ঢাকার আদালতে গত সপ্তাহে জবানবন্দি দিয়েছেন।
ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ভারতের কলকাতায় সংসদ সদস্য খুন হয়েছেন—এই বার্তা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতাকে পৌঁছে দিতেই মূলত ওই ছবি কামালের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তাঁকে এ-ও বলা হয়েছিল, ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ওই নেতার মনোনয়ন পাওয়া এখন নিশ্চিত।
ছবিটি কেন কামালের কাছে পাঠানো হয়েছিল—এ বিষয়ে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এখানে দুটি বিষয় থাকতে পারে। প্রথমত, খুনিরা হয়তো চেয়েছিলেন আনোয়ারুল হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব হিসেবে উপস্থাপন করতে। দ্বিতীয়ত, ঝিনাইদহ-যশোর-খুলনা অঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা এই খুনের বিষয়ে অবগত থাকতে পারেন। এর কারণ হিসেবে ডিবি সূত্র বলছে, শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাজী কামালের বাইরেও ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আরও এক নেতার নাম জানা গেছে।
এদিকে সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা কাজী কামালকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।
আদালতে ডিবির রিমান্ড আবেদনে বলা হয়েছে, চরমপন্থী নেতা শিমুল ভূঁইয়ার আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামালের নাম এসেছে। গত ১৫ মে ভারতের কলকাতা থেকে দেশে ফেরেন শিমুল। এর পরদিন ১৬ মে কামালের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন তিনি। তাঁদের দেখা হয় ১৭ মে, ফরিদপুরের ভাঙ্গায়। সেখানে ছবির (সংসদ সদস্যকে খুনের পর তোলা ছবি) বিষয়ে এবং টাকা লেনদেন নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হয়।
কাজী কামালের মামাতো ভাই সংসদ সদস্য খুনের মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন। ডিবি সূত্র বলছে, সংসদ সদস্যকে খুনের আগে শিমুল ভূঁইয়াকে কাজী কামালের মুঠোফোন নম্বর দেন আক্তারুজ্জামান।
গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম। খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১২ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে ডিবি। এর মধ্যে খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আক্তারুজ্জামান ২০ মে ঢাকা থেকে প্রথমে দিল্লি যান। সেখান থেকে নেপালের কাঠমান্ডু যান তিনি। এরপর দুবাই হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানতে পেরেছে। অন্য আসামিদের মধ্যে মো. সিয়াম হোসেন নেপালে আটক হন। এখন তিনি কলকাতা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আরেক আসামি ‘কসাই’ নামে পরিচিত জিহাদ হাওলাদারও ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শিমুল ভূঁইয়া, তাঁর ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া, শিলাস্তি রহমান ও কাজী কামাল। এর মধ্যে প্রথম তিনজন অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। পলাতক থাকা অন্য আসামিরা হলেন মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজি ও মো. জামাল হোসেন।