রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন

তিন মাসে হাতে কুরআন লিখে চমক দেখালেন সৈয়দপুরের সেলিম!

ওসমান আলী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) থেকে :
  • Update Time : বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪
  • ৬৬৭ Time View

হাতের লেখা খারাপ থাকায় ক্লাসে হুজুরের পরামর্শে স্বহস্তে পবিত্র কোরআনুল কারিম লিখলেন সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অসুরখাই এলাকার সেলিম উদ্দিন রেজা (১৯)।

টানা তিন মাস ছয়দিনে প্রচেষ্টায় তিনি কোরআন শরিফের ৩০ পারাই হাতে লিখেছেন। সেলিম আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসার ছাত্র। তিনি ওই এলাকার মোহাম্মদ ইমান আলীর ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, মসজিদের ভেতরে বসেই তিন মাস ধরে পবিত্র কোরআন লিখেছেন সেলিম। ৩০ পারা কোরআনুল কারিম হাতে লিখতে সেলিমের এ-ফোর সাইজের ৪০০টি কাগজ লেগেছে। কলম লেগেছে ৫৫টির মতো। এ কাজে সেলিমের ব্যয় হয়েছে দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা।সেলিম বলেন, ছোটবেলায় তার হাতের লেখা একেবারেই ভালো ছিল না। এজন্য তাকে মাদরাসার হুজুরেরা অনেক সময় বকেছেন তাকে। মায়ের হাতে পিটুনিও খেতে হয়েছে অনেক। ক্লাসের হুজুরের পরামর্শে প্রথমে কয়েকটি আয়াত এরপর সুরা লিখতে গিয়ে সিদ্ধান্ত নিই পবিত্র কোরআনুল কারিম হাতে লিখবো। শুরুও করে দেই। তিন মাসের চেষ্টায় পুরো পবিত্র কোরআনুল কারিম হাতে লিখে শেষ করি।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের বয়সী ছেলে মেয়েদের মধ্যে ফেসবুক আসক্তি ব্যাধির মত ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় সময় কারণে–অকারণে বেশির ভাগ সময় আমরা ফেসবুকে সময় দিচ্ছি। এতে আমাদের সময় নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে সৃষ্টিশীলতা, কর্মক্ষমতা। কিন্তু আমি আল্লাহ ও রাসুলের (সা.) সন্তুষ্টি অর্জন ও ফেসবুক ইউটিউব আসক্তি থেকে মুক্ত থাকতে পবিত্র কোরআনুল কারিম লেখায় সময় ও মনযোগ দিয়েছি। পবিত্র কোরআনুল কারিম (৩০ পারা) হাতে লিখতে পারাকে জীবনের সেরা অর্জন হিসেবে মনে করেন সেলিম। এ মহান কাজটি করতে পেরে তিনি আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করেছেন।
সেলিমের বাবা ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আমার ছেলে সেলিম রেজা যে কাজটা করেছে তাতে আমি অনেক খুশি। আমি দেশবাসীর কাছে আমার ছেলের জন্য দোয়া চাচ্ছি। আমি গরিব মানুষ কোন রকমে ছেলেটাকে পড়াশুনা করাচ্ছি। টাকা পয়সা থাকলে আরও ভালো জায়গায় দিতাম। আমার সেলিমসহ তিন ছেলে বাকি দুই ছেলে অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমাদের সংসার চলে। মসজিদে মুয়াজিনের বেতনে তার লেখাপড়ার খরচ চলে।

অসুরখাই জামে মসজিদে সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, সেলিম অসহায় গরিব পরিবারের সন্তান। পড়ালেখার পাশাপাশি আমাদের মসজিদে সামান্য বেতনে চাকরি করে সে। তার বাবা একজন দিনমজুর। তার দুই ভাই অন্যের বাড়িতে কাজ করে। নিজের প্রচেষ্টায় সে পবিত্র কোরআনুল কারিমের ৩০ পারাই হাতে লিখেছেন। তার হাতে লেখা পবিত্র কুরআনুল কারিম দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছে। আমরা চাই তাকে সরকারি কোরো সুযোগ-সুবিধা দিলে সে আরও ভালো কিছু করবে সমাজে।

সেলিমের সহপাঠী মো. বেলাল হোসেন বলেন, প্রথমে বিশ্বাস করিনি যে সত্যি সত্যি পুরো পবিত্র কোরআনুল কারিম হাতে লিখেছেন। আমরা তখন কয়েকজন বন্ধু তাদের বাসায় এসে দেখি হুবহুব পবিত্র কুরআনুল কারিমের মতো হয়েছে। আর সেলিমের হাতে লেখা কোরআনুল কারিম পড়া যাচ্ছে।সেলিম বললেন, আমি পবিত্র কোরআনুল কারিম হাতে লিখেছি নিজের ভালো লাগা থেকে। এ কোরআনুল কারিমের কপি আমি কখনোই বিক্রি করব না। আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য হাতে পবিত্র কোরআনুল কারিম লিখিনি। তবে এখন ভাবি, আমার এ কাজ দেখে অন্যরা অনুপ্রাণিত হতেও পারেন। আর হাতে লেখা কোরআনুল কারিম বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতে চাই, যাতে আমি যখন থাকব না তখনো আমার এ কাজ মানুষের কাছে সংরক্ষিত থাকবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin