গাছ নাকি কথা বলছে— এমন অলৌকিক গল্পের পেছনে ছুটে চলছেন অসংখ্য মানুষ। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের গর্জিনা গ্রামে। এমন অলৌকিক ঘটনা দেখতে ও গাছের সঙ্গে কথা বলতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অসংখ্য মানুষ। তবে এটি নাকি জিনের কাণ্ড হতে পারে— এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় মসজিদের এক ইমাম।
শনিবার সরেজমিন জানা যায়, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের অজপাড়াগাঁও গর্জিনা গ্রাম। এ গ্রামের সৌদি প্রবাসী সবুর মিয়া। তার রয়েছে একটি গাছের বাগান। এলাকাবাসীর ভাষায়— বেশ কয়েক দিন আগে বিকালে ওই বাগানের একটি লম্বু (স্থানীয়দের ভাষায়) গাছ কাটতে যায় ওই গ্রামেরই জুয়েল মোল্লার ছেলে নিরবসহ (১০) কয়েকজন শিশু। শোনা যায়, তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে গাছটির গায়ে আঘাত করলে গাছটি নাকি কথা বলে ওঠে। এ সময় ওই শিশুরা ভয় পেয়ে বাড়ি গিয়ে পরিবারের লোকজনের কাছে জানালে তারা গাছটি দেখতে আসেন। এ সময় তারা গাছের গায়ে কান পেতে রাখলে গাছের ভেতর থেকে মেয়েলি কণ্ঠের আওয়াজ শুনতে পান বলে জানান।
এরপর থেকে অলৌকিভাবে গাছ কথা বলে— এমনটি অপ্রচার ডালপালা ছড়াতে থাকে এলাকায়। বাতাসে ভাসতে ভাসতে তা এলাকার বাইরেও বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। দলে দলে লোকজন আসতে থাকে, কেউ কেউ নানা মানতও করতে শুরু করেন। আর এমন খবরে কিছু মিডিয়া বা ইউটিউবার ভিড় জমান ওই এলাকায়। লোকজনও চাঞ্চল্যকর এ সংবাদটিকে সত্য ভেবে আসতে থাকেন গর্জিনা গ্রামে গাছটিকে দেখার জন্য। গাছটি দেখতে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বরিশাল, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দলে দলে লোকজন এসে ভিড় করতে শুরু করেন।
গাছ কথা বলে এমনটি শোনার পর সাধারণ মানুষ আসতে শুরু করলে একটি মহল গাছটির চারপাশে বাঁশ দিয়ে বেঁধে দেয়। পরে এটি একটি ব্যবসা উল্লেখ করে সেই বাঁশ ভেঙে দেন কিছু যুবক। গাছের গায়ে গোবর লেপার কারণে এক নারী অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলেও দাবি করেন স্থানীয়রা। তবে অনেকেই গাছ কথা বলে এ কথা অস্বীকার করে এটি জিনের কাণ্ড হতে পারে বলে জানান।
সবুর মিয়ার আত্মীয় ও ডিশ ব্যবসায়ী ফরহাদসহ তার কয়েকজন বন্ধু দাবি করে বলেন, আমরা ওই গাছের সঙ্গে কানপাতার পর একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পাই। যেন মেয়েটি আর্তনাদ করছে। আবার কেউ কেউ শব্দ শুনে বলছেন— ক্লান্ত শরীর নিয়ে কোনো রোগী গলা দিয়ে যেমন শব্দ করে- সে রকম শব্দ হচ্ছে।
স্থানীয় রাঘদী ইউপির মেম্বার সাদ্দাম হোসেন, রাঘদী গ্রামের লিয়াকত হোসেন, টেকেরহাট সোহেল মাতব্বর, গর্জিনা গ্রামের ফরিদ মোল্লাসহ আগন্তুক ও কৌতূহলী মানুষ গাছের গায়ে কান পেতে কথা শোনার চেষ্টা করেন। শুধু বড়রাই নয়, কথা শোনার চেষ্টা করে শিশুরাও। এতে অনেক দর্শনার্থী গাছের কথা শুনতে পান দাবি করে— এটি অলৌকিক বলে দাবি করেন।
স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা মোহাম্মদ বাদশা জানান, এ ধরনের ঘটনাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তবে জিনকে গাছের মধ্যে আটকে রাখার কারণে এমনটি হয়তো হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঘদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিদুর রহমান টুটুল বলেন, ওই গাছের কথা শুনতে প্রতিদিন শত শত লোক ভিড় করছেন। আমি মনে করি যারা গাছের কথা শুনেছেন, তাদের কথা বিশ্বাস করা যায় না। কিছু লোক অতিউৎসাহী হয়ে মানুষকে অলৌকিক ঘটনা বিশ্বাস করানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুসরাত শারমিন বলেন, এমনটা হতে পারে মানুষগুলো প্রথম যখন গাছে কান পেতেছিলেন, তখন আশপাশের কোনো শব্দকে তার অবচেতন মনে গাছের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেছেন। এরপর সেই ভ্রান্ত ধারণা বিশ্বাস করেন। আরও যারা কান পেতেছেন তাদেরও কানে এক ধরনের ভ্রম বা বিভ্রাট তৈরি হচ্ছে। গাছটির নাম আফ্রিকান মেহগনি। স্থানীয়ভাবে এটিকে লম্বু গাছ বলেও ডাকা হয়।