সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২১ অপরাহ্ন

পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশন নানা সমস্যায় জর্জরিত

ওসমান আলী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর)প্রতিনিধি:
  • Update Time : সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪
  • ৫০৭ Time View

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমযোনের সর্ববৃহৎ রেল জংশনের নাম দিনাজপুরের পার্বতীপুর। ১৪৪ বছর আগে নির্মিত এ স্টেশনটির নাম সমগ্র ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ব্রিটেন পর্যন্ত পৌছেছিল।

কিন্তু স্বাধীনতার পরে দীর্ঘ ৫৩ বছরে বারংবার স্টেশনটির আধুনিকায়নের দাবি করা হলেও বরাবর তা উপেক্ষিত থেকেছে। স্টেশনটি দ্রুত আধুনিকায়ন করে যাত্রী সেবারমান উন্নীত করতে পারলে এস্টেশনের বার্ষিক আয় বর্তমানের চেয়ে দিগুন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে এখানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মনে করেন।

দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি, ২৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, পার্বতীপুর উত্তর-পশ্চিম মৎস্য সমপ্রসারণ প্রকল্প, রেলওয়ে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা (কেলোকা), পার্বতীপুর রেলহেড অয়েল ডিপো, রেলওয়ে ডিজেল কারখানা, পার্বতীপুর বীর উত্তম শহীদ মাহবুব সেনানিবাস ও বিদেশী মিশনারী দ্বারা পরিচালিত ল্যাম্ব হাসপাতালের কারণে দেশি বিদেশি যাত্রীদের গমনাগমনে জংশনটির গুরুত্ব বেড়ে গেছে বহুগুণ।

বাংলাদেশ রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় জোনের বৃহৎ ও গুরুত্বপূর্ণ দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেল জংশন স্টেশনটি বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি না থাকায় কমেছে প্রয়োজনীয় লোকবল একই সাথে সংস্কারের অভাবে যাত্রীসেবার মানও নেই। আর এর ফলে ষ্টেশনের আয় অনেক কমে এসেছে।

প্রায় অর্ধলক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত পার্বতীপুর শহর রেলপথ দ্বারা নতুন বাজার ও পুরাতন বাজার এলাকার দু’ভাগে বিভক্ত। শহরের নতুন বাজার ঢাকা মোড়ের কাছে ১নং রেলগেটটি বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকায় জনগন দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এখানে একটি ওভর ব্রীজ নির্মানের দাবি দীর্ঘদিনের। শহরের পূর্বে নতুন বাজার শহীদ মিনার থেকে স্টেশনে ওভার ব্রিজের মাধ্যমে পশ্চিমে রেল পার্ক এলাকায় যেতে হয়।

 

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ষ্টেশনে পর্যাপ্ত পয়ঃ নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। পাঁচটি প্লাটফরমের মধ্যে ষ্টেশনের ২, ৩, ৪ ও ৫নং প্লাটফরমে কোন টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। যাত্রী সাধারণ প্রয়োজনের তাগিদে শহরের গণশৌচাগার ব্যবহার করেন। তবে অভিভাবকরা তাদের ছোট সন্তানদের স্টেশনের প্লাটফর্মের উপরে বা পাশে প্রস্রাব পায়খানা সেরে নেয়। ফলে সেখানে ময়লা ও দুর্গন্ধে পরিবেশ দূষিত করে। রেল স্টেশনে পানির জন্য হাহাকার অবস্থা।

যাত্রীদের বিশ্রামাগার সব সময় থাকে তালাবদ্ধ থাকায় সেখানে কেউ বসতে পারে না। ১নং প্লাটফর্মে ভিআইপি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ভিন্ন ভিন্ন বিশ্রামাগার থাকলেও দেখা যায়, শুধুমাত্র দ্বিতীয় শ্রেণির মহিলা বিশ্রামাগারটি খোলা থাকে। স্টেশনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নাই। বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারে ভীতিকর পরিস্থিতিতে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

জানা গেছে, ১৮৭৯ সালে ৫টি প্লাটর্ফম বিশিষ্ট পার্বতীপুর রেল জংশন স্টেশন স্থাপিত হয়। চলাচলকারী ট্রেন সংখ্যার বিচারে দেশের বৃহত্তম রেল জংশন। এখান থেকে ৪টি রুটে (পার্বতীপুর-দিনাজপুর, পার্বতীপুর-চিলাহাটি, পার্বতীপুর-খুলনা-রাজশাহী ও পার্বতীপুর-ঢাকা) আন্তঃনগর, মেইল, লোকালসহ প্রতিদিন ৪১টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে।

প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় ২০-৩০ হাজার যাত্রী বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করে থাকে। আন্তঃনগর সব ট্রেনের আসন সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অত্যন্ত কম। ট্রেনের টিকেট না পেয়ে এবং হকার ও হিজরাদের ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে ট্রেনযাত্রীরা সড়ক পথে চলাচল করছে।

আর একারনে রেলের আয় দিন দিন কমে এসেছে। রেল ষ্টেশনের প্রধান আয়ের উৎস মালামাল পরিবহন। আগে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চাল, গম, পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করা হতো। ৭-৮ বছর আগে গুডস্ লাইনগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সেগুলো মেরামতের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখান থেকে কোন মালামাল লোড আনলোড কার্যক্রম হয় না। এজন্য স্টেশনের আয় অনেক কমে এসেছে।

স্টেশন মাস্টার মো. রফিক চৌধুরী জানান, প্রয়োজনীয় স্টাফ না থাকায় পূর্নাঙ্গ যাত্রীসেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়া গুডস্ লাইন মেরামত না করায় কোন মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে না। ফলে আয় কমে এসেছে। তিনি বলেন, এখানে ১২ জন সহকারী স্টেশন মাস্টারের স্থলে আছে ৬ জন। ১নং প্লাটফর্মে ভিআইপি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ভিন্ন ভিন্ন বিশ্রামাগার থাকলেও কোন লোকবল নাই।

এজন্য বিশ্রামাগারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে ৫৩ জন গার্ডের বিপরীতে আছে ৩২ জন গার্ড। বৃটিশ আমলে নির্মিত স্টেশনের বিল্ডিংটি পুরোটাই ঝুকিপূর্ণ। বৃষ্টি হলেই পানি চুয়ে পড়ে। তবুও কোন মেরামত করা হয়নি। অপারেটিং স্টাফ সংকটের কারণে ট্রেন চলাচলের সময়সূচি চরম ভাবে বিঘ্নিত হয়ে থাকে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin