বহুবছর আগে মৃত্যুবরণকারী পীর ‘ভাই পাগলা’। শুয়ে আছেন বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তার নামেরই কবরস্থানের নাম হয় ভাইগাগলার মাজার কবরস্থান। সেই পীর ভাই পাগলা শাজাহানপুর এলাকার মনতাজ আলীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন দুইবার। তার সাথে থেকেছেন। রাতে ঘোরাফেরাও করেছেন। এসময় মৃত ওই পীর মনতাজকে বলেছেন আগামী এক মাসের মধ্যে তোর মৃত্যু হবে। নিজের কবর নিজেই খুরে নে। এমন পাগলামী মতলব থেকে নিজের কবর নিজেই খোড়া শুরু করেছেন ৮০ বছর বয়সী মনতাজ আলী। বিষয়টি নিয়ে পুরো এলাকায় তুলকালাম কান্ড ঘটে যাচ্ছে। ঘটনা বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলার পাততেখুর এলাকায়। ২৮ জুন শুক্রবার এই ঘটনার সূত্রপাত।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায় দুইজন কাজের লোককে সাথে নিয়ে মনতাজ তার পছন্দের একটি জায়গায় কবরটি খুড়ছেন। তাকে ঘিড়ে উৎসুক মানুষ জড়ো হয়ে কবর খোড়ার দৃশ্য দেখছেন।
কেন তিনি জীবিত অবস্থায় কবর খুড়ছেন জানতে চাইলে প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি মনতাজ। পরে অনেক সময় অপেক্ষার পর বলেন, আমি আলামত পেয়েছি, এজন্য কবর খুড়ছি। কিসের আলম পেয়েছেন জানতে চাইলে আবারো চুপ করে থাকেন। বারবার জানতে চাইলে ক্ষেপে বলেন আল্লাহর কসম আর একটি কথাও বলবো না। পুরো ঘটনা জানতে আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একবার বলে উঠলেন ভাই পাগলা পীরে সাথে আমার দেখা হয়েছিলো। দুই রাত আমার সাথে থেকেছে। রাতে এই এলাকা ঘুড়েছে। তিনি আমাকে কবর খুড়তে বলেছেন। এজন্য আমি আমার পছন্দের জায়গায় কবর খুড়ছি।
মমতাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন,”আমার আব্বা কবর খুঁড়ে রাখছেন। আবার বালি দিয়ে পূরণ করে দিবেন। মৃত্যুর পর তাকে যেন এই স্থানে কবর দেয়া হয় সেজন্য এ কাজ করছেন”।
উৎসুক মানুষরা জানান, মনতাজ একজন পীরভক্ত মানুষ। সমাজের কারো সাথে তার তেমন মেলামেশা নেই। ঈদের দিন বিকালে পাশের ঈদগাহের মাঠে গিয়ে একাই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। এলাকাবাসী আরো বলেন, মমতাজ উদ্দিন শুধু এক ওয়াক্ত (ফজরের) নামাজ পড়েন। তিনি লোকেদেরকে বলতেন এক আল্লাহ, এক নামাজ। তিনি ছোট বেলা থেকে খালি পায়ে চলাচল করেন এবং শুধু পুকুরে গোসল করেন। মনতাজ একজন আধ্যাতিক মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
এ বিষয়ে আশেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হয়রত আলী মুঠোফোনে জানান, মৃত্যুর আগেই কবর খুঁড়ে রাখার বিধান কি আমার জানা নাই। তবে ওই ব্যক্তি যদি অছিয়ত করে তবে আমরা তার মৃত্যুর পর ওই স্থানে করব দেয়ার ব্যবস্থা করবো। তিনি আরো বলেন, কবর খোঁড়া বন্ধ করে দেয়ার জন্য ব্যবস্থা করছি।
জীবিত অবস্থায় কেউ নিজের কবর নিজে খুড়ে রাখতে পারবে কিনা এ বিষয়ে এ সম্পর্কে মহিমাগঞ্জ আলিয়া কামিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ইসলামি চিন্তাবিদ ড. মুহাম্মদ মোখলেসুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি মানবজমিনকে জানান, ইসলাম এমন বিষয়কে কোনভাবেই সমর্থন করে না। পবিত্র কোরআনে সুরা লোকমানের শেষ আয়াতে আল্লাহ ঘোষণা করেছেন ‘ কে কোথায় কীভাবে মৃত্যুবরণ করবে, কোথায় কবর হবে তার কেবলমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। সুতরাং কারো মৃত্যুর সময়, কবর নির্দিষ্ট করা কবীরাহ গুনাহ। তিনি আরো বলেন, অগ্রিম কবর খোড়ার নজির আল্লাহর রসূলের সময় ছিলো না, সাহাবাদের সময়ও ছিলো।