বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন

মেকআপ আর্টিস্ট ইপ্সিতার শতকোটি টাকার সম্পদ!

নিউজ ডেস্ক:
  • Update Time : শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪
  • ২৬ Time View
ইপ্সিতা ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানের প্রথম পক্ষের মেয়ে।

ফারজানা রহমান ইপ্সিতা। বয়স তার মাত্র ৩২। বসবাস করেন কানাডায়। নিজেকে পরিচয় দেন একজন মেকআপ আর্টিস্ট হিসাবে। কানাডায় পড়াশোনা শেষে এই পেশায় যোগ দিয়েছেন তিনি। একজন মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কতই বা আয় তার। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্যি, এই অল্প বয়সেই বিলাসী জীবনযাপনের পাশাপাশি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সাততলা বাড়িসহ শতকোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার এত সম্পদের উৎস কী? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ইপ্সিতা ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদ্য সাবেক সদস্য মো. মতিউর রহমানের প্রথম পক্ষের মেয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাবা মতিউরের অবৈধ আয়ের অর্থই তার নামে করা হয়েছে।

ইপ্সিতা পাঁচটি কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। আয়কর ফাইলে তার প্রকাশিত সম্পদই আছে ৪২ কোটি টাকার। ইতোমধ্যেই কানাডায় তার বাড়ি-গাড়িসহ বিলাসী জীবনের ছবি ঘিরে নেট দুনিয়ায় হৈচৈ চলছে। কিন্তু কানাডার চেয়ে খোদ দেশেই তার সম্পদের পরিমাণ বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মতিউর রহমান তার চাকরিজীবনে অবৈধ পথে বিপুল অর্থ রোজগার করেছেন। বিভিন্ন কৌশলে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে বৈধ করার অপচেষ্টাও চালিয়েছেন। মেয়ে ইপ্সিতার নামে থাকা বিপুল সম্পদ তারই নমুনা মাত্র। একাধিক সূত্রে খোঁজ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য জানা গেছে।

আয়কর নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ইপ্সিতা তার আয়কর নথিতে ৪২ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য তুলে ধরেন। এর মধ্যে সাত কোটি টাকা বিনিয়োগ দেখিয়েছেন ৫টি কোম্পানিতে। কোম্পানিগুলো হচ্ছে, সোনালী সিকিউরিটিজ, সিনাজি ট্রেডিং, গ্লোবাল সুজ, ওয়ান্ডার পার্ক ও মামুন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস। সিনাজি ট্রেডিং লিমিটেডে ৫০ হাজার শেয়ারের মালিক হিসাবে তার বিনিয়োগ রয়েছে ৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া গ্লোবাল সুজ কোম্পানিতে ৪ কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার, ওয়ান্ডার পার্কে ১০ লাখ, মামুন অ্যাগ্রো প্রোডাক্টসে ৪৫ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯০ ও সোনালী সিকিউরিটিজে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ রয়েছে। নরসিংদী, গাজীপুর ও ঢাকায় জমি ও বাড়ির দাম দেখিয়েছেন তিনি প্রায় ১৩ কোটি টাকা। প্রকৃত অর্থে এসব সম্পদের দামই ৭০ কোটি টাকার বেশি।

আয়কর নথিতে আরও দেখা গেছে, ব্যাংক আমানত, সঞ্চয়পত্র, নিজের কোম্পানিকে দেওয়া ঋণ ও ভাইকে দেওয়া ধার বাবদ তার সম্পদ আছে ২২ কোটি টাকার। নরসিংদীতে হেবামূলে দেড় একর জমির মালিক ইপ্সিতা। আয়কর নথিতে এই জমির বর্ণনা দেওয়া থাকলেও দাম উল্লেখ করা হয়নি। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিলাসবহুল যে সাততলা বাড়ি ইতোমধ্যে মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে সেই বাড়িটিও মেয়ের নামেই করেছেন মতিউর রহমান। ৫ কাঠা জায়গার ওপর ৭ তলা বাড়িটির দাম অন্তত ৫০ কোটি টাকা হলেও আয়কর নথিতে দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। বিদেশি টাইলস ও ফিটিংসে মোড়ানো বাড়িটিতে সুইমিংপুলও আছে। নীলক্ষেতে পার্কিং স্পেসসহ দেড় হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাটের দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৬০ লাখ টাকা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যার কথা বলা হচ্ছে তার বয়স ও পেশার সঙ্গে সম্পদের পরিমাণ স্পষ্টতই অস্বাভাবিক। বাবার প্রভাবে তিনি শুরু থেকেই ছাড় পেয়েছেন। তা না হলে সন্দেহজনক সম্পদ বৃদ্ধির কারণে তার আয়কর ফাইল আগেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার কথা ছিল রাজস্ব বিভাগের। কিন্তু বাবার প্রভাবে তিনি আটকাননি। প্রকৃতপক্ষে দেশে যারা কর ফাঁকি দিতে চান তারা পার পেয়ে যান। আর যারা স্বচ্ছতার সঙ্গে কর দিতে চান তারাই নানামুখী হয়রানির শিকার হন। এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচিত হবে মতিউর রহমান, তার দুই পক্ষের স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনের সম্পদের খোঁজ নেওয়া।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মতিউর রহমানের মেয়ের ব্যবসায় বিনিয়োগ করার অর্থের উৎস কী তা খতিয়ে দেখলেই সত্যটা বেরিয়ে আসবে। আর মতিউর রহমান নিজে ব্যবসায় বিনিয়োগ করে থাকলে, বিনিয়োগের আগে সরকারি অনুমতি নিয়েছেন কি না সেটা এবং তার অর্থের উৎস যাচাই করলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

সূত্র: যুগান্তর অনলাইন

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin