সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ভারতকে সব দিয়ে এলেন, এ দেশের মানুষের জন্য কি নিয়ে এলেন?’
এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। নাহলে যেকোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন।’
শনিবার (২৯ জুন) বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নয়াপল্টনস্থ দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমাবেশের মূল লক্ষ্য একটাই, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি। তিনি এ দেশের প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কারাগারে ছিলেন। টানা ৯ বছর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছেন। কোনোভাবেই তিনি পিছপা হননি। ছাত্রদেরকে সাথে তিনি স্বৈরাচারকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।’
বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে জানিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, ‘৬০০’র বেশি নেতাকে গুম করা হয়েছে। অনেক নেতাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে এদেশ থেকে গণতন্ত্রকে স্থিমিত করেছে।’
‘আমরা অনেক আত্মত্যাগ করেছি, আন্দোলন আরো তীব্র করে তুলতে হবে। সাহস করে প্রতিরোধ গড়ে তোলাই আমাদের কাজ।’ এক্ষেত্রে তরুণদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্নীতিতে যাদের নাম প্রকাশ পাচ্ছে, শুধু তারাই নন, এর চেয়ে বড় রাঘব বোয়ালরা জড়িত আছে।’
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রীর মুক্তি দিন। অন্যথায় যেকোনো পরিণতির জন্য সরকারকে তৈরি থাকতে হবে।’
সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, ‘ভারতকে সব দিয়ে এলেন, এ দেশের মানুষের জন্য কি নিয়ে এলেন? নিয়ে এসেছেন- মানুষের ভোটাধিকার হরণ।’
সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আসুন আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। তাকে মুক্তি করি।’
‘এ সরকার ক্ষমতায় থাকা মানে দেশ ধ্বংস হওয়া, দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়া’ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশনেত্রী মুক্তির আন্দোলন আর থামবে না। তাকে মুক্ত করেই ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘এই সরকারের প্রত্যেকটি সেক্টরের প্রধান দুর্নীতি দায়ে অভিযুক্ত। এই সরকারই তো দুর্নীতিগ্রস্ত।’
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা শুধু তার জন্য নয়, প্রয়োজন এই দেশের মানুষের জন্য।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে আইনের শাসন নেই, মানুষের ভোটাধিকার নেই, বাকস্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। যেখানে অন্যায় আইনে পরিণত হয়েছে। কেউ কথা বললে গুম-খুন হয়। জেলখানায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়। সেই দেশে কি শুধু প্রতিবাদ করে বের হতে পারবো – না। এখানে প্রতিরোধ কর্তব্য হিসেবে দাঁড়িয়েছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমাদের আওয়াজ একটাই- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আর গৃহে আবদ্ধ থাকতে দিবো না। ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা লড়াই চালিয়ে যাবো। আর ঘরে ফিরে যাবো না, যতক্ষণ পর্যন্ত না দেশনেত্রীর মুক্তি না মিলবে।’
মিথ্যা মামলায় প্রহসনের রায় দিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করেছে সরকার- এমন অভিযোগ করে বক্তব্যে নেতারা বলেন, ‘দেশনেত্রীকে মুক্তি দিন। বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার কারণে তাকে কারাগারে ও গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই- রাজনীতি থেকে দূরে রাখা।’
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো: শাহজাহান, নিতাই রায় চৌধুরী, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, জয়নুল আবদীন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।