বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:০৩ অপরাহ্ন

জয়পুরহাটে ফাঁসির আসামির নিকট থেকে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল

মোস্তাক আহম্মেদ, জয়পুরহাট থেকে :
  • Update Time : সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪
  • ১৭ Time View
জয়পুরহাটের জেষ্ঠ্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এসএম শাহীন ফাঁসির দণ্ড পাওয়া এক পলাতক আসামির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, দণ্ড পাওয়া পলাতক আসামি দেওয়ান বেদারুল ইসলামের বেদিনের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নেয় শাহীন। শুক্রবার (২৮ জুন) দুপুর ২টার দিকে দেওয়ান বেদারুল তার নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে টাকা নেওয়ার ভিডিওটি পোস্ট করেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওই বেঞ্চ সহকারীকে টাকা নিতে দেখা গেছে।
অভিযুক্ত শাহীন ক্ষেতলাল উপজেলার  মৃত তসলিম সরদারের ছেলে৷
দেওয়ান বেদারুল ইসলাম তার ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা ভিডিও’র ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘সাধু-সাবধান-জয়পুরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সম্মানীয় পেশকার  শাহীন আমার মামলার রায়ে ফাঁসির ভয় দেখিয়ে রায়ে খালাশ করে দেবে বলে বিজ্ঞ বিচারক আব্বাস উদ্দীনের নাম করে টাকা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
ভিডিওটি পোস্টের পর সেখানে শনিবার (২৯ জুন) রাত ৮টা পর্যন্ত ভিডিওটি ৬ হাজার ৪শ’ এর বেশি ভিউ হয়েছে। ওই ভিডিও’র স্কিনে ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখ লেখা রয়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওটির সময় ছিল ৬ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড। তবে ভিডিও পুরো সময়ে সাউন্ড বন্ধ ছিল।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তি গায়ে জ্যাকেট ও মাথা মাফলার পড়ে একটি কক্ষে প্রবেশ করছেন। ওই কক্ষে একটি হত্যার মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি দেওয়ান বেদারুল ইসলাম বেদিন ছিলেন। বেদারুল ইসলাম কক্ষের বাল্ব জ্বালিয়ে দেন। এরপর বাইর থেকে একটি লাল রংঙের ব্যাগ হাতে নিয়ে দেওয়ান বেদারুল ওই কক্ষে এসে সামনাসামনি হয়ে কিছু কথা বলে সোফায় বসে পড়েন এবং ব্যাগটি তার পাশের টেবিলের ওপর রাখেন। পরে তারা দুজন কথোপকথন করেন। এরমাঝে লাল ব্যাগ কয়েক বান্ডিল টাকা বের করে ওই ব্যক্তির হাতে দেন। টাকাগুলো ঠিক আছে কি-না সেটিও দেখে নেন তিনি। ওই ব্যক্তি লাল ব্যাগটি চেয়ে নিয়ে তার মধ্যে টাকাগুলো নেন। তারপর তাদের আবারও কথোপকথন হয়। এরপর আবার বেদারুল কয়েক সেকেন্ডের জন্য কক্ষ থেকে বাসার ভেতরে যান। তিনি আবারও কক্ষে ফিরে আসেন। এরই কিছুক্ষণ পর সেখানে গায়ে চাদর ও মাথায় কাপড় পরা এক নারী সেখানে আসেন। তাকে হাত নাড়িয়ে কথা বলতে দেখা যাচ্ছিল। তবে ভিডিও শেষ হলেও কাউকে কক্ষ থেকে বের হতে দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভিডিওতে থাকা ব্যক্তিটি বেঞ্চ সহকারী এসএম শাহিন নিজের বলে স্বীকার করেন। তবে ভিডিওতে দেখতে পাওয়া টাকা নেওয়ার বিষয়টি ঘুষ নেওয়ার ঘটনা নয় বলে তিনি দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, বেদিন কাউকে এমন টাকা দিবে সেটা কি চিন্তা করে দেখা যায়? তিনি কি কেসের (মামলা) টাকা দিয়েছে? তার সঙ্গে আমার বড় ভাইয়ের একটা সম্পর্ক ছিল। সেই সুবাধে টাকা ধার নেওয়া যায় বা লেনদেন করা যায়। আমি তার কাছে ধার নিয়েছিলাম। ৫০ হাজার টাকা ছিল। এখন বেদিন কি সেই লোক? তাকে হুমকি দিয়ে টাকা নেওয়ার মতো লোক আছে? এতোদিন পর এসে সুর তুলেছে। ছয় মাস হয়ে গেল, মামলা রায় হয়ে গেছে। কোনো কিছু তেমন না পেয়ে, এই ভিডিও খোঁজে বের করে এসব করছে।
দেওয়ান বেদারুল ইসলাম ফেসবুকের মেসেঞ্জার কলে বলেন, এ বিষয়ে আমি আগামীকাল রবিবার বিস্তারিত বলবো। আমার মামলার এক-দুদিন আগে তিনি টাকা নেন। আমি মামলার রায়ের অসমাপ্ত কপি কীভাবে পাব? জয়পুরহাট আইনজীবী সমিতির মিটিং আছে। মিটিং হয়ে গেলে আমি বিষয়টি বলবো।
এর আগে গত ৩ জুন জয়পুরহাটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারীর নাঈম হোসাইনের সঙ্গে এক আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী ও তার সহকারী প্রিয়ম হোসেনের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ঘটনায় ওইদিনই বেঞ্চ সহকারী নাঈম হোসাইন বাদী হয়ে আইনজীবী গোলাম মোর্শেদ আল কোরেশী ও প্রিয়মের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আমলী আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়। এ মামলায় আইনজীবী ও তার মোহরার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন।
এ ঘটনায় সমিতির সদস্য কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের সঙ্গে দেখা করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিষ্পত্তির জন্য আলোচনা করেন। কিন্তু সন্তোষজক সমাধান হয়নি। এরপর গত ২৪ জুন থেকে আইনজীবীরা অনির্দিষ্টকালে জন্য জেষ্ঠ্য জেলা ও দায়রা জজ মো. নূর ইসলামের আদালত বর্জন করেছেন। এখনও বিষয়টি সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে জেষ্ঠ্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী এসএম শাহিন এক ফাঁসির আসামি দেওয়ান বেদারুল ইসলাম বেদিনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ায় ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
জয়পুরহাট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহনূর রহমান শাহীন বলেন, আমাদের একটি জরুরি মিটিং ডাকা হয়েছে। একটি হত্যা মামলার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির কাছে থেকে টাকা নেওয়ার ভিডিও  ছড়িয়ে পড়েছে, সেটা নজরে এসেছে। এটি না-কি ধারের টাকা, সেটি বেঞ্চ সহকারী শাহীন জানিয়েছে। আর হত্যা মামলার আসামির সঙ্গে আদালতের বেঞ্চ সহকারীর আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক থাকলে এটি বিরাট অপরাধ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেদারুল ইসলাম বেদিন জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাঁচুর চক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মোয়াজ্জেম হোসেন হত্যা মামলার আসামি। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দিন বেদারুল ইসলামসহ ১১ জন আসামির ফাঁসির আদেশ দেন। একই সঙ্গে আসামিদের প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। ওই মামলার রায় ঘোষণার পাঁচ দিনের মাথায় গত ৫ ফ্রেরুয়ারি দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দীনের হাউজিং এস্টেটের ভাড়া বাসার গ্রিল কেটে ভেতরে ঢুকেন। তারা অতিরিক্ত দায়রা জজ মো. আব্বাস উদ্দীনকে ফাঁসি দেওয়ার হুমকি দেন। ৩১ জানুয়ারি রায়ের পলাতক আসামিরা তাকে হুমকি দিতে পারেন বলে ধারণা করে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ নিজেই বাদি হয়ে জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই ঘটনার পর গত ২০ ফেরুয়ারি বিচারক মো. আব্বাস উদ্দীনকে প্রত্যাহার করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin