রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১২:০৭ পূর্বাহ্ন

নওগাঁয় ১২ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য!

খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ  থেকে :
  • Update Time : শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪
  • ১০৫ Time View
নওগাঁয় জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। গ্রাহকদের অভিযোগ, সমিতির কর্মকর্তারা আড়াই শতাধিক গ্রাহকের প্রায় ১২ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা শুক্রবার (৫ জুলাই) দুপুর ১২ টায় নওগাঁ পৌরসভার জগৎসিংহপুর এলাকায় সমিতিটির প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ গ্রাহকেরা সমিতির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মুকুল হোসেনের বাড়ির সামনে ভিড় করেন।
প্রতারিত গ্রাহকেরা বলছেন, নওগাঁ পৌরসভার জগৎসিংহপুর গ্রামে ২০১৯ সালে জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেড নামের একটি সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হয়। নওগাঁ জেলা সমবায় কার্যালয় থেকে সমিতিটি নিবন্ধন নেন জগৎসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মুকুল হোসেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে ব্যাংকের আদলে মাসিক ও বার্ষিক আমানত প্রকল্প, স্থায়ী বিনিয়োগ ও স্থানী আমানত নামে বিভিন্ন প্রকল্পের বিপরীতে টাকা জমা রাখতে শুরু করে। টাকা জমা রেখে গ্রাহকদের প্রতি মাসে মুনাফা দিতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ধীরে এর গ্রাহক সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। এভাবে গত পাঁচ বছরে আড়াই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ১২ কোটির বেশি টাকা হাতিয়ে নেয় সংস্থাটি। জগৎসিংহপুর সূর্যমুখী বহুমুখী উন্নয়ন সমবায় সমিতির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মুকুল হোসেন ও সহ-সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।
ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, প্রতিষ্ঠার পর শুরুর দিকে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে আমানতের বিপরীতে গ্রাহকদের লভ্যাংশের টাকা নিয়মিত দিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দুই-তিন মাস ধরে মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পরেও সংস্থার লোকজন গ্রাহকদের আমানত ফেরত ও লভ্যাংশের টাকা জমা দিতে টালবাহানা করতে থাকে। আমানতের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য গ্রাহকের চাপ দিতে থাকলে গত ২ জুলাই মুকুল হোসেন, দেলোয়ারসহ সমিতির অন্যরা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যান। এখন আমানতের টাকা ফেরতের জন্য প্রতিদিনই গ্রাহকেরা সমিতির কার্যালয় ও সমিতির সভাপতি মুকুল হোসেনের বাড়ির সামনে ভিড় করছেন।
টাকা ফেরতের দাবিতে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা নওগাঁ পৌরসভার বটতলী-বোয়ালিয়া সড়কের জগৎসিংহপুর মোড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। এতে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর আলম, শফিকুল ইসলাম, ওয়াসিম খান, আনিছুর রহমান, জতন কুমার সরকার, আবু হান্নান সরদার প্রমুখ বক্তব্য দেন।
ভুক্তভোগী আনিছুর রহমান বলেন, তিনি অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য। সূর্যমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মুকুল হোসেন ও তিনি একই ব্যাটালিয়নে দীর্ঘ দিন চাকরি করেছেন। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মুকুলের কথায় বিশ্বাস করে মুনাফা লাভের আশায় ছয় মাস আগে ২৪ লাখ টাকা সূর্যমুখী সমবায় সমিতিতে স্থায়ী আমানত হিসেবে জমা করেন। প্রতি মাসে লাখে আড়াই হাজার টাকা করে মুনাফা দেওয়ার শর্তে তিনি ওই টাকা জমা দেন। টাকা জমা দেওয়ার পর থেকেই লভ্যাংশ দেওয়া নিয়ে সমিতির লোকজন টালবাহানা শুরু করে। এর মধ্যেই গত ২ জুলাই থেকে মুকুল ও তাঁর সহযোগীরা সমিতির কার্যালয়ে তালা দিয়ে লাপাত্তা। তাঁদেরকে ফোনেও পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা।
মুকুল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে কথা হয় তাঁর স্ত্রী সিথী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গ্রাহকের কাছ থেকে আমানতের টাকা জমা দিয়ে তাঁর বিপরীতে উচ্চহারে মুনাফা দিতে গিয়ে আমার স্বামী লোকসানের মধ্যে পড়ে গেছেন। অপরিকল্পিতভাবে সমিতি পরিচালনা করায় এখন তাঁর সব পুঁজি নাই হয়ে গেছে। গ্রাহকের চাপ সহ্য করতে না পারায় তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এখন গ্রাহকেরা গত কয়েক দিন ধরে আমার বাড়ি ঘিরে রেখেছে। আমাদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না। আমার ছেলেকে মারধর করেছে। দোষ করলে আমার স্বামী করেছে, আমাদের কি দোষ।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করে সূর্যমুখী সমবায় সমিতি নামের একটি সমিতির কর্মকর্তাদের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার বিষয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমিতির কোনো সদস্য এ ব্যাপারে আমার কাছে লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি আমি নিজে তদন্ত করব। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতারণায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin