দিনাজপুরে বৃষ্টি হলেই কদর বাড়ে ছাতা কারিগরদের। বছরের অন্য সময়ে ছাতা মেরামতের কাজ না থাকলেও বর্ষার এ মৌসুমে পুরো দস্তুর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা। প্রতিদিন ৫০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করে থাকেন একেকজন কারিগর।
জানা গেছে, দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে আগে ছাতা মেরামতের কোনো কারিগর ছিল না। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাতা মেরামত করতে এই এলাকায় আসতেন ছাতার কারিগররা। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ দিকে এসে আশ্বিন মাসের শেষ দিকে তারা চলে যেতেন। বেশিরভাগ মাদারীপুর, চাঁদপুর, ফরিদপুর ও বিক্রমপুর থেকে আসতেন ছাতার কারিগররা। তারা উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসে ফুটো কিংবা ভাঙা ছাতা মেরামত করতেন। ছাতার কারিগরদের সারা বছর কদর না থাকলেও বর্ষা মৌসুমে তাদের বেশ চাহিদা থাকে। বর্ষা এলেই কদর বৃদ্ধি পায় তাদের।
উপজেলার গ্রামীণ শহর রানীর বন্দরের দরগাহপাড় মসজিদ চত্বরে ছাতা মেরামতকারী নশরতপুর গ্রামের মো. নুরুজ্জামান জানান, বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে কাজের চাপ একটু বেশি। বৃষ্টির সময় ছাড়া ছাতা মেরামতের কাজ থাকে না। এসময় তাদের আয় মোটামুটি ভালো হলেও অন্য সময় বেকার বসে থাকতে হয়।
তিনি আরও জানান, যেদিন বৃষ্টি হয় সেদিন ছাতা মেরামতের কাজ হয়ে থাকে। বাকি দিনগুলোতে অন্য কাজ করে থাকি। তার ছেলেমেয়েরা স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করে। তাদের খরচসহ পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। এ পেশায় তাদের পরে আর কেউ আসবে না বলেও জানান তিনি।
ছাতা মেরামতকারী উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের গছাহার গ্রামের আমিনুল মেম্বারপাড়ার আব্দুর রহমান বলেন, বর্তমানে ছাতা মেরামত করে আয় সামান্য হয়। ছাতার সিক লাগাই। কাপড় সেট করি। প্রতিদিন ছাতা মেরামত করে দৈনিক ২০০-৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয়। এ টাকায় আমার সংসার চলে না। কিন্তু পূর্ব পুরুষের এ পেশা ছাড়তেও পারি না।
ছাতা মেরামতকারীদের দুরবস্থার কারণ হিসেবে জানা গেছে, বর্তমানে ১০০-২০০ টাকায় ছাতা পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ায় ছাতা নষ্ট হয়ে গেলে অনেকেই আর মেরামত করেন না। তারা আবার নতুন ছাতা কিনে নেন। আগে কাঠের হাতলওয়ালা ছাতার প্রচলন ছিল। গ্রামের লোকেরা কাঠের হাতলের ছাতা ব্যবহার করতেন। সেই ছাতাও তৈরি হতো। কিন্তু এখন আর সেইদিন নেই। ছাতার বাজার চায়না ও ভারতের দখলে গেছে। তাই কাঠের ছাতার কারিগরদের দুর্দিন চলছে।