মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:০২ পূর্বাহ্ন

দিনাজপুরে ‘ডগ হাউসে’ সোহাগের বছরে আয় ২৫ লাখ টাকা!

ওসমান আলী, পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
  • Update Time : বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪
  • ২১০ Time View

বাড়ির সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ‍‘ডগ হাউস’। গেট খুলে ঢুকতেই চোখে পড়ে অসংখ্য লোহার খাঁচা। একেকটি খাঁচায় রয়েছে নানা প্রজাতির বিদেশি কুকুর। সাড়ে ৯ বছর আগে শখ করে একটি কুকুর পালন করতে গিয়ে খামার গড়ে তুলেন কুকুর প্রেমী জাহিদ ইসলাম সোহাগ।

তার খামারে আমেরিকান লাসা, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মান শেপার্ড, ব্ল্যাক শেপার্ড, উল্ফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ রয়েছে বিদেশি নানা প্রজাতির কুকুর। এসব কুকুর পালনসহ প্রজনন করিয়ে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন তিনি। অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কুকুর বিক্রি করেন জাহিদ। দেশ-বিদেশের কুকুর প্রেমীরা ব্যতিক্রমী এই খামার থেকে কিনে নিয়ে যান পছন্দের কুকুর। প্রকারভেদে কুকুরের দাম ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। এ খামার থেকে বছরে তার আয় ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা।

কুকুর প্রেমী জাহিদ ইসলাম সোহাগ দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকার বাসিন্দা। দিনাজপুর শহর থেকে দুই কিলোমিটার উত্তরে চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর নয়নপুর এলাকায় ‘ডগ হাউস’ নামে তার এই কুকুরের খামার। সাড়ে ৯ বছর আগে শখের বশে প্রথমে একটি ও পরে দু’টি বিদেশি কুকুর নিয়ে শুরু হয় এই খামারের যাত্রা। এই কুকুরের প্রথমে তিনটি ও পরে সাতটি বাচ্চা প্রজননের মাধ্যমে তার ভাগ্য খুলে যায়। অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে শুরু করেন কুকুর বিক্রি।

খামারের কুকুরগুলো খুবই বন্ধু সুলভ। এদের সঙ্গে দিনে দুই থেকে তিনবার খাঁচা থেকে বের করে খেলাধুলা করেন জাহিদ। প্রতিদিন কুকুরগুলো খাওয়ানো ও গোসল করানোর কাজ নিজেই করছেন তিনি। তার ভালোবাসার বেশ ভক্ত কুকুরগুলো। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এটি হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় কুকুরের খামার।

ডগ হাউস নামে এই খামারটিতে রয়েছে ১৩ প্রজাতির ৬৩টি কুকুর। খামারটি নিয়মিত পরিদর্শন ছাড়াও কুকুর লালনপালনে রোগ না ছড়ানোর পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা।

ডগ হাউসের মালিক জাহিদ ইসলাম সোহাগ বলেন, শুরুটা আমর স্ত্রীকে ভালোবেসে একটা কুকুর উপহার দিয়ে। সেখান থেকে শখের বসে কুকুর পালন শুরু। আমার ৬ থেকে ৭টা বিজনেস আছে এর পাশাপাশি যখন আমি কুকুর ও বিড়ালকে খামারে সময় দেই তখন আমার বেশ ভালো লাগে। পৃথিবীতে কুকুর একমাত্র প্রাণী যে মালিকের জন্য তার জান দিতে পারে। একবার আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিল তখন আমার দোকানের কর্মচারীরা পালিয়ে গেলেও আমার পোষা কুকুরটা ছিনতাইকারীদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। আমার মনে হয় মানুষের থেকে পোষা প্রাণীকে ভালোবাসলে তারা আপনার বিপদে পাশে থাকবে। সেই থেকে ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে খামার গড়ে তুলেছি। এখন আমার খামারে আমেরিকান লাসা, জাপানি লাসা, চায়না লাসা, জার্মান শেপার্ড, ব্লাক শেপার্ড, উল্ফ, এলসেশিয়ান, গোল্ডেন রিটাইভারসহ ১৩ প্রজাতির ৬৩টি কুকুর রয়েছে। প্রকারভেদে এসব কুকুর ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বাণিজ্যিকভাবে কুকুর বিক্রিতে আমার আয় ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা।

চেহেল গাজী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জার্জিস সোহেল বলেন, আমি সবেমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছি। আমি শুনেছি আমার ইউনিয়নে এক তরুণ যুবক একটি কুকুর খামার তৈরি করে বেশ লাভবান হচ্ছে। আমি খামারটি পরিদর্শন করে দেখব তার যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয় আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে সহয়তা দেব।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. সারোয়ার হাসান বলেন, গবাদি প্রাণীর খামারের পাশাপাশি দিনাজপুরে অনেকেই পোষা পাখি বা প্রাণী বিশেষ করে কুকুর বিড়াল ও খরগোশ পালনে আগ্রহী হচ্ছে। বাসায় কুকুরের খামার বা কুকুর পালন করার চিন্তা করেন দিনাজপুর জেলার নয়নপুরের মো. জাহিদ ইসলাম সোহাগ। বর্তমান খামারে আমেরিকান লাসা, জাপানি লাসা, জার্মান শেফার্ড, ব্ল্যাক শেফার্ড ইত্যাদি জাতের মোট ৬৩টি কুকুর আছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ নিয়মিতভাবে চিকিৎসাসেবা, টিকা প্রদান ও উন্নত ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশে সঙ্গী, প্রাণী হিসেবে কুকুর অপরিহার্য হয়ে উঠছে দিনকে দিন। আমি সোহাগ সাহেবের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin