ঘোষণাটা গত বছরই দিয়ে রেখেছেন আনহেল ডি মারিয়া। ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে গত বছরের ২৩ নভেম্বর করা পোস্টে জানিয়েছিলেন, এবারের কোপা আমেরিকায় খেলেই আর্জেন্টিনার জার্সি তুলে রাখবেন। তা দিন গড়িয়ে সেই সময় তো চলে এলো!
আগামী সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায় কোপার ফাইনাল খেলতে মাঠে নামবে লিওনেল স্কালোনির দল। আর্জেন্টিনার জার্সিতে এটাই হবে ৩৬ বছর বয়সী ডি মারিয়ার শেষ ম্যাচ।
আর্জেন্টিনা আজ ফাইনালে ওঠার পর স্বাভাবিকভাবেই ডি মারিয়াকে আবেগ ছুঁয়ে যাওয়ার কথা। সেই ২০০৮ সালে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলে তাঁর অভিষেক। এই ১৬ বছরে দেশের জন্য নিজেকে নিংড়ে দিয়েছেন এ উইঙ্গার। বিনিময়ে পেয়েছেন বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা ও ফিনালিসিমা জয়ের আনন্দ। দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য ভক্তের ভালোবাসা তো আছেই, তবে সেমিফাইনাল জয়ের পর ডি মারিয়া অন্য এক ভালোবাসা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। সেই ভালোবাসা কোনো ভক্তের নয়, সতীর্থদের!
ডি মারিয়া সতীর্থদের সেই ভালোবাসার প্রকাশ দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। কেঁদেছেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। তার কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে খেলা। মাঠে মেসির সঙ্গে দারুণ জুটি গড়া ডি মারিয়া ৭৮ মিনিটে মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকদের একটি অংশ উঠে দাঁড়িয়ে তাঁকে সম্মান দেখিয়েছেন, এটাও অনেক বড় মাপের ভালোবাসার প্রকাশ। তবে, কানাডা ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি দলকে উদ্দীপ্ত করতে ডি মারিয়ার প্রতি যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, তাতে আর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি বেনফিকা তারকা।
ম্যাচ শেষে মিক্সড জোনে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ডি মারিয়া। সেখানে আর্জেন্টিনার জার্সির প্রতি টান এবং তাঁর প্রতি সতীর্থদের ভালোবাসাটুকু জানাতে গিয়ে চোখ ভিজে এসেছে আর্জেন্টিনার ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এই খেলোয়াড়ের, ‘১৪ জুলাই (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী ১৫ জুলাই ফাইনাল) যা–ই ঘটুক, আশা করি, মাথা উঁচু রেখে বিদায় নিতে পারবো। মাথা উঁচু রেখে বিদায় নিতে যা যা করা সম্ভব, সবই করেছি। নিজেকে নিংড়ে দিয়েছি। এই জার্সির জন্য নিংড়ে দিতে কোনো কিছু বাকি রাখিনি। হ্যাঁ, সময় কখনো কখনো আমার পক্ষে ছিল না। তবে শেষ দিকে এসে এটা শুরু হয়েছে।’
ডি মারিয়া এরপর তাঁর জাতীয় দল সতীর্থদের নিয়ে বলেছেন, ‘যারা আমাকে সমর্থন দিয়েছে, তাদের সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমার পরিবারের প্রতি এবং এই দলটার প্রতিও (কৃতজ্ঞ), যারা আমাকে সবকিছু দিয়েছে। আজ (কানাডা ম্যাচের আগে) মাঠে নামার আগে লিও (মেসি) বলেছে, তারা আমার জন্য ফাইনালে উঠতে চায়। হৃদয়টা গর্বে ভরে গেছে। শেষ সময়ে তাদের (জাতীয় দলের সতীর্থ) সঙ্গে যা কিছু জিতেছি, সবই আমার গর্বের উৎস।’
ডি মারিয়া আরও জানিয়েছেন, অবসরের পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ইচ্ছা নেই তাঁর, ‘জাতীয় দলের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচ খেলতে এখনো প্রস্তুত নই। তবে এটাই সময়। যেভাবে শেষ করার স্বপ্ন দেখেছি, সেটাই হচ্ছে—আরেকটি ফাইনালে পৌঁছেছি।’
অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং সতীর্থদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আর্জেন্টাইন এই তারকা বলেন, ‘আমার সতীর্থরা জানে, সিদ্ধান্ত পাল্টাবো না। ব্যাপারটি আগেই চূড়ান্ত হয়েছে। তারা আমার সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছে। এখন আর একটি ম্যাচই বাকি আছে। মনে হচ্ছে, এখনো চালিয়ে যেতে পারবো, তবে সময় এটাই। যা যা দিতে হতো, সেসবের সবকিছু নিংড়ে দিয়ে এখন হাতে আর একটি ম্যাচই আছে। এই জার্সির জন্য আমি সর্বস্ব দিয়েছি এবং আমার মনে হয়, বিদায় বলার এটাই সেরা সময়।’