কমিটির সভাপতি বা অন্য সদস্যদের না জানিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি এবং পছন্দের প্রার্থীকে আগাম সেই প্রশ্ন জানিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বিষয়টি সন্দেহজনক হলে পরীক্ষা চলাকালীন স্থগিত করা হয় কার্যক্রম। ঘটনা বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ধনকুণ্ডি শাহানাজ-সিরাজ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে গত শুক্রবার ছয়টি পদের নিয়োগ পরীক্ষা চলছিলো। ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি গোলাম মাহবুব প্যারিস এসব অভিযোগের কথা মানবজমিনকে জানান। তিনি পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টিও নিশ্চিৎ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, (১২জুলাই) বিকেল চারটায় ওই বিদ্যালয়ের সভাকক্ষে নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করা হয়। সে মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা শুরু হলেও মাঝামাঝি সময়ে এসে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। নিয়োগ কমিটির অন্যতম সদস্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম নিজের পছন্দের প্রার্থীকে চাকরি পাইয়ে দিতে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন বলে জোড়ালো অভিযোগ উঠেছে। এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের চুক্তিতে তিনি এই কাজটি করেন বলেও জানিয়েছেন খোদ নিয়োগ কমিটির একাধিক সদস্য। এই ঘটনায় চাকরি প্রার্থী ও স্থানীয় শিক্ষানুরাগীসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ক্ষোভ জানিয়েছেন। পাশাপাশি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবি জানান তাঁরা।
সম্প্রতি ওই বিদ্যালয়ের শুন্য ছয়টি পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে ছয়জন, অফিস সহকারি পদে সাতজন, কম্পিউটার ল্যাব সহকারি পদে আটজন, অফিস সহায়ক পদে ছয়জন, নিরাপত্তা কর্মী চারজন ও আয়া পদে তিনজন চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন। তাদের পরীক্ষার নির্ধারিত দিন শুক্রবার অংশ নিতে চিঠি দেওয়া হয়। সিংহভাগ চাকরি প্রার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেন। কিন্তু নিয়োগ কমিটির দুইজন সদস্যকে না জানিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম একাই প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। এমনকি পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্রের ছবি মোবাইল ফোনে ছবি তুলে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জানিয়ে দেন তিনি। পরীক্ষা চলাকালিন বিষয়টি ধরা পড়লে নিয়োগ কমিটির সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়।
এছাড়া চাকরি প্রার্থী ও সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, ছয়টি পদের বিপরীতে চাকরি প্রার্থী কয়েকজনের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কিন্তু ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাঁর সব পরিকল্পনাই ভেস্তে গেছে। চাকরি প্রার্থী ও সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধি এসব অভিযোগ করেছেন।
তারা আরো বলেন, ছয়টি পদের বিপরীতে চাকরি প্রার্থী কয়েকজনের সঙ্গে গোপন চুক্তি করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের লেনদেনও হয়েছে। ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তাঁর সব পরিকল্পনাই ভেস্তে গেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ওইসব প্রতিনিধিা। পরে সভাপতির আপত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।
নিয়োগ কমিটির পাঁচ সদস্যদের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন অর রশিদ ও বগুড়া জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) এসএম রেজাউল করিম। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম মাহবুব প্যারিস ও সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
বিষয়টি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চাইলে ধনকুণ্ডি শাহানাজ সিরাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি গোলাম মাহবুব প্যারিস মানবজমিনকে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার নিয়ম হলো প্রশ্নপত্র তৈরির সময় কমিটির সভাপতিসহ অন্য দুই একজন সদস্যের স্বাক্ষর নিতে হবে। তাদের সমন্বয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে। অথচ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম নিজেই তার মত করে প্রশ্নপত্র তৈরি করেছেন। আমরা কিছুই জানি না। আমাদের স্বাক্ষরও নেয়া হয়নি। তাছাড়া পরীক্ষা চলাকালে মনে হয়েছে তার কিছু পছন্দের প্রার্থীকে প্রশ্নপত্র আগাম মোবাইল ফোনের মধ্যেমে দেয়া হয়েছে। এমন সন্দেহ থেকেই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমি ওই নিয়োগ পরীক্ষায় ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা। আমার উপজে আরো দুই জন বিশেষ কর্মকর্তা ছিলেন। আমি নিজে একাই প্রশ্ন তৈরি করিনি এবং ফাঁসও করিনি। অভিযোগটি ভিত্তিহীন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের (ডিজি) প্রতিনিধি বগুড়া সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামুন অর রশিদ মানবজমিনকে বলেন, প্রশ্নপত্র তৈরির সময় আমি নিজে ছিলাম, এসিল্যান্ড ছিলেন, সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক ছিলেন। কে কি অভিযোগ করছেন সেগুলো তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।