শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:২১ অপরাহ্ন

রাস্তা-ঘাটের বেহাল দশা : দূর্ভোগে নওগাঁ পৌরবাসী

খালেদ বিন ফিরোজ, নওগাঁ  থেকে :
  • Update Time : শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪
  • ১০৮ Time View
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় নওগাঁ পৌরসভার রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পিচ ঢালাই আর ইটের খোয়া উঠে রাস্তার মাঝে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ঠিকমতো ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানিতে কোথাও কোথাও ডোবায় পরিণত হয়েছে। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। বেহাল দশা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়েছে পৌরবাসী।
৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেনীতে উন্নীত হয় এ পৌরসভা। যার আয়তন ৩৮ দশমিক ৩৬ বর্গ কিলোমিটার। এ ৯টি ওয়ার্ডে পাড়া-মহল্লার অন্তত ৩০টি সড়ক আছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন এসব সড়ক সংস্কার হয়নি। পিচ ঢালাই আর ইটের খোয়া উঠে অসংখ্য স্থানে ক্ষতবিক্ষত, ভাঙ্গাচোরা ও ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ঠিকমতো ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টিতে ডোবায় পরিণত হয়। এতে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা শিকার হচ্ছে পথচারী। পৌরবাসী শুধু আশ^াসের বানী শুনে যাচ্ছে। কবে মিলবে প্রতিকার সে অপেক্ষা।
নওগাঁ পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড পার-নওগাঁ মহল্লার পুরাতন আলুপট্টিতে চালকল মালিকদের ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র। আলু পট্টি থেকে সুলতানপুর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সকড়ের পিচ ঢালাই আর ইটের খোয়া উঠে রাস্তার মাঝে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ঠিকমতো ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি জমে ডোবায় পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। গত ১৫ বছর রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় এমন দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পথচারীসহ এলাকাবাসীদের। এমন চিত্র পৌরসভার প্রধান সড়ক ও অলিগলিসহ অন্তত ৩০টি সড়কের।
পৌরসভার সুলতানপুর মহল্লার বাসীন্দা রিকশা চালক মোকছেদ আলী। তিনি বলেন- গত ৪০ বছর ধরে রিকশা চালিয়ে জীবন-জীবিকা চলছে। এই সড়কে গত ১৫ বছর থেকে পিচ ও খোয়া উঠে বড় বড় গর্ত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে ডোবায় পরিণত হয়। ব্যাটারি চালিত রিকশা চলাচলের সময় মর্টারের মধ্যে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায়। প্রায় তো বিয়ারিংয়ের সমস্যা হয়। নিজের রিকশায় চালিয়ে দিনে আয় হয় অন্তত ৬০০ টাকা। গত এক মাসে রিকশা মেরামতে ব্যয় হয়েছে অন্তত ৪০০ টাকা। এভাবে প্রতিমাসে রিকশা মেরামতে আয়ের একটি অংশ চলে যাচ্ছে। আমার মতো এ রাস্তায় প্রতিদিন শতাধিক রিকশা চলাচল করে। আর ট্রাক ও ট্রাক্টরতো আছেই।
শহরের বাঁঙ্গাবাড়িয়া মহল্লার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন- নওগাঁ সরকারি কলেজ থেকে সদর থানার মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী চলাচল করে। সবশেষ এ সড়কটি ২০০৫ সালে সংস্কার করা হয়েছিল। ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির পানি সড়কের ওপর জমা হয়। আবার সকড়ের পাশে থাকা ডাস্টবিনের ময়লা-আর্বজনায় মশা-মাছির উপদ্রব ও গন্ধ ছড়ায়। কাদা-পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হয় শিক্ষার্থীদের। রিকশার যাত্রীদের গুনতে হয় বাড়তি ভাড়াও। বছরের পর বছর ধরে শুনে আসছি রাস্তা হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখছি না।
সুলতানপুর মহল্লার আরেক বাসীন্দা কুরবান হোসেন বলেন- পৌরসভায় সময়মতো ভ্যাট-ট্যাক্স সবই দিতে হয়। কিন্তু আমরা তার সুফল পাচ্ছিনা। পৌরসভায় প্রথম শ্রেনীর তকমা লাগানো হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পৌরবাসী।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী সিরাজুম মনিরা জুই বলেন- বৃষ্টির পানি রাস্তায় জমে থাকে। কাদা-পানি মাড়িয়ে আমাদের কলেজে যেতে হয়। অনেক সময় পোশাক নোংরা হয়ে যায়। আবার রিকশা এ রাস্তায় আসতে চাইনা। যদিও আসে ১০-১৫ টাকা বাড়তি ভাড়া বেশি দিতে হয়। প্রতিনিয়ত আমাদের দূর্ভোগে শিকার হতে হচ্ছে। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা প্রয়োজন।
নওগাঁ পৌরসভা মেয়র মোঃ নজমুল হক সনি বলেন- ইতোমধ্যে ডিগ্রী কলেজ থেকে থানার মোড় পর্যন্ত সড়কটি টেন্ডার এবং ওয়ার্ক অর্ডার হয়ে গেছে। স্থিতিস্থাপক নগর ও আঞ্চলিক উন্নয়ন প্রকল্প (আরইউটিডিপি প্রকল্প) থেকে শহরের ট্রাফিক বক্স থেকে সুলতানপুর জেলেপাড়া এবং গোস্তহাটির মোড় থেকে নাপিতপাড়া পর্যন্ত এ দুইটি রাস্তাকে মডেল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় শহরের আরো যেসব বড় রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলো সংস্কার করা হবে। যা আগামী ৬মাসের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
তিনি আরো বলেন- স্থানীয় সরকার বিভাগের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশের ২৫টি শহর অন্তর্ভুক্তিমুলক স্যানিটেশন’ প্রকল্পের আওতায় এই পৌরসভাও আছে। যা থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি সরবরাহের পাইপ লাইন পাওয়া গেছে। এসব কাজ সম্পূর্ন্ন হলে নওগাঁ শহর একটি মডেল শহরে পরিনত হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 trinomulkhobor.com
Developed by: A TO Z IT HOST
Tuhin