রোববার ঠিক দুপুর ১টা বেজে ২৮ মিনিটে ‘পবিত্র মুহূর্তে’ খোলা হলো ভারতের ওড়িশা রাজ্যে অবস্থিত পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের দরজা। রত্ন ভাণ্ডারের দরজা খোলার আগেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ৬টি বড় সিন্দুক। অবশ্য আজ সেই রত্ন ভাণ্ডারে শুধু বিশেষজ্ঞ কমিটির দলের সদস্যরা ঘুরে দেখবেন বলে জানা গেছে। রত্নভাণ্ডার খোলার বিষয়ে ছাড়পত্র দেয় মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজির সরকার। এরপরই শুরু হয় যায় প্রস্তুতি।
ভারতীয় প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ও রাজ্য সরকার ও মন্দির কর্তৃপক্ষের তৈরি করে দেয়া কমিটি বৈঠকে বসে ঠিক করে রথ ও উল্টোরথের মাঝামাঝি সময় যখন ভগবান জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি মন্দির থেকে বাইরে বের করে নিয়ে আসা হবে তখনই রত্নভাণ্ডার খোলা হবে। নানা রহস্যময় গল্প ছড়ানো রয়েছে এই রত্নভাণ্ডারকে ঘিরে। অবশেষে তার দরজা খোলার পর ভিতরে কী রয়েছে তা নিয়ে কৌতূহলী ওড়িশা-সহ গোটা দেশ। এর আগে এই মন্দিরের কোষাগারের দরজা সর্বশেষ ১৯৭৮ সালে খোলা হয়েছিল। এদিকে রত্ন ভাণ্ডারে থাকা গয়না ও অন্যান্য সম্পদের তালিকা তৈরির প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে আরবিআইয়ের সাহায্য নেয়া হচ্ছে।
রত্ন ভাণ্ডারের সামগ্রীর তালিকা তৈরির সময় রিজার্ভ ব্যাংকের প্রতিনিধিরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। এর আগে ১৯৭৮ সালে যখন রত্ন ভাণ্ডারের সামগ্রীর তালিকা তৈরি করা হয়েছিল, সেবার ৭০ দিন লেগেছিল সেই কাজ সম্পন্ন করতে। তবে এবার ডিজিটাল ক্যাটালগ তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। অমূল্য গয়না ছাড়াও ভিতরা ভাণ্ডারে রয়েছে ‘রেজা সুনা’ (সোনা) ও রুপো। এগুলো মন্দিরের দেবতাদের গয়না মেরামতির কাছে ব্যবহৃত হত। রত্ন ভাণ্ডার খুলে তার ভিতরের সামগ্রী দেখার জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে ভিতরে কাঠের বাক্সে সব জিনিস রাখা থাকত, এই আবহে সেই সব বাক্সের কী হাল, তা জানা নেই কারও। কারণ এত বছরে সেই রত্ন ভাণ্ডারের কোথা থেকে পানি চুইয়ে পড়তেই পারে। এর আগে ১৮০৫ সালে প্রথমবার সরকারিভাবে জানা যায় যে পুরীর রত্ন ভাণ্ডারে কী আছে। এই রত্ন ভাণ্ডার আদতে ১১.৮ মিটার উঁচু একটি মন্দির। প্রায় ২০৯ বছর আগে পুরীর তৎকালীন কলেক্টর চার্লস গ্রোম দাবি করেছিলেন রত্ন ভাণ্ডারে ময়ূরপঙ্খির আকারের মুকুট থেকে শুরু করে সুন্দর কারুকার্য করা সোনা ও রুপোর গয়না আছে। ওই দুটি রত্নভাণ্ডারের মধ্যেই জগন্নাথ দেবের বৈদূর্য মণি ও নীলকান্ত মণি রয়েছে। বহির ভাণ্ডারের মূল্যবান জিনিসগুলো মাঝে মধ্যে খুলে পুজো ও উৎসবের সময় ব্যবহার করা হলেও ভিতর ভাণ্ডার ৪৬ বছর বাদে খোলা হচ্ছে। বহির ভাণ্ডারে রয়েছে জগন্নাথদেবের আভূষণ ও মূল্যবান সামগ্রী।