‘পাড়ার লোকেরা হামাক রাসেলের মা কয়া ডাকতো। একন হামার ছাওয়াল তো আর নাই, হামিও নাই’। ছেলের রক্তমাখা কাপড় হাতে নিয়ে বলছিলেন রাসেলের মা অঞ্জনা। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নারায়নগঞ্জের ডিআইটি রোডে গুলিতে নিহত হন নওগাঁর রাসেল।
এদিকে এক মাত্র ছেলেকে হারিয়ে ৫ দিন ধরে কাঁদতে কাঁদতে বাকরুদ্ধ রাসেলের বাবা পিন্টু। ১৮ বছরের ছেলে রাসেলের কবরের পাশে বসে বিলাপ করছেন আর ডাকছেন সৃষ্টিকর্তাকে।
জানা যায়, অন্যের জমিতে ঘর তুলে বসবাস করছেন পিন্টু। তার ২ মেয়ে ও ১ ছেলে। ২ মেয়ের মধ্যে ছোটটা শারীরিক প্রতিবন্ধী। সবার ছোট রাসেল। অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য রাসেল চাকরি করছিলেন নারায়নগঞ্জের একটি তৈরি পোশাক কারখানায়। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকাল মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান রাসেল।
রাসেল নওগাঁর মান্দা উপজেলার কসবা ভোলাগাড়ি গ্রামের পিন্টু ছেলে। তিনি নারায়নগঞ্জের ডিআইট রোড এলাকায় গত ১৯ জুলাই দুপুরে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে বুকে গুলিবিদ্ধ হন। বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর দিন অপারেশন করে গুলি অপসারণ করা হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। গত সোমবার তিনি মারা যান। পরদিন মঙ্গলবার তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আনা হয় এবং বুধবার দাফন করা হয়।
রাসেলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা রাশেদা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। আর পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন বাবা পিন্টু। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষের জমিতে কাজ করি। মানুষের জমিতে থাকি। আমার নিজের বলতে কিছুই নেই। ছেলেকে কবর দিয়েছি মানুষের জমিতে। আমার আয় দিয়ে পরিবারের সবার মুখে ভাত দিতেই জীবন যায়যায়। ভেবেছিলাম ছেলের পাঠানো টাকা দিয়ে অসুস্থ বউয়ের চিকিৎসা করাব। আর হলোনা। আমার সব শেষ হয়ে গেল।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার ছেলে কোনো দিন স্কুলে যায়নি। অভাবের সংসারে আমি কোনো সন্তানকে স্কুলে দিতে পারিনি। আমার ছেলে কোনো আন্দোলন করেনি, মিছিলে যায়নি। তারপরেও আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমি এখন কি করে খাব? কেমন করে চলব? কার কাছে বিচার দেব? কি নিয়ে বাঁচব?’
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য পাঞ্জাব আলী বলেন, ‘এই গ্রামে পিন্টুর চেয়ে গরীব লোক আর নেই। টাকার অভাবে ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া করাতে পারেননি তিনি। রাসেলই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। এখন ভিক্ষা করে খাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় পিন্টুর নেই।’